গৃহবন্দি ছিলেন নেতাজি, হেরিটেজ তকমা পায়নি শতবর্ষ প্রাচীন বাড়ি
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ ৮৯ বছর আগের কথা। কার্শিয়াংয়ে দাদার বাড়িতে নজরবন্দি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। চার দেওয়ালের বাইরে পা রাখতে পারছেন না। ব্রিটিশ সরকারের কড়া নজরদারি। সেই ঘরে বসেই কংগ্রেসের হরিপুর সভার বক্তৃতা প্রস্তুত করেন নেতাজি। শতবর্ষ প্রাচীন সেই বাড়ি এখনও হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়নি। অভিযোগ, এ ব্যাপারে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে একাধিকবার দরবার করে কোনও লাভ হয়নি। এনিয়ে হতাশ স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা।
বর্তমানে ওই ভবন নেতাজি মিউজিয়াম অ্যান্ড সেন্টার ফর স্টাডিস ইন হিমালয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস সোসাইটি অ্যান্ড কালচারের হাতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার অফিস ইনচার্জ গণেশ প্রধান বলেন, শতবর্ষ প্রাচীন তথা নেতাজির স্মৃতি বিজরিত বাড়িটিকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ব্যাপক সুবিধা হবে। কিন্তু, কেন সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না।
দার্জিলিং জেলায় ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা অসংখ্য। সেগুলির মধ্যে কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড় একটি। সংশ্লিষ্ট এলাকা স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজির স্মৃতিবিজরিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯০৬ সালে গিদ্দাপাহাড়ে প্রায় পৌনে দুই একর জমির উপর একতলা বাড়ি তৈরি করেন এক ব্রিটিশ সাহেব। ১৯২২ সালে সেই বাড়িটি কিনে নেন নেতাজির মেজদা তথা ব্যারিস্টার শরৎচন্দ্র বসু। সংশ্লিষ্ট বাড়িতে বহুবার ঘুরতে এসেছেন নেতাজি। ১৯৩৬ সালে সংশ্লিষ্ট বাড়িতেই তাঁকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল ব্রিটিশ সরকার। সেই সময় তিনি কংগ্রেসের হরিপুর কনভেনশনের বক্তৃতা লিখেছিলেন। এখান থেকেই অস্ট্রিয়ায় স্ত্রী এমিলি শেঙ্কনের কাছে বহু চিঠি লিখেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী সংশ্লিষ্ট বাড়ি এখন হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়নি বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ওই ভবনকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিতে হবে। বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে এই দাবি পূরণ করা জরুরি।
বর্তমানে শতবর্ষ প্রাচীন বাড়িটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। প্রায় ২৯ বছর আগে বাড়িটি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। তারা ইতিমধ্যে বাড়িতে মিউজিয়াম চালু করেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাড়িটি প্রায় ১১৯ বছরের প্রাচীন। ১৯৯৬ সালে বাড়িটি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একতলা বাড়িটিতে তিনটি বড় এবং চারটি ছোট রুম, বারান্দা রয়েছে। সেখানে নেতাজির লেখা ১০-১৫টি চিঠি, বিদেশ থেকে তাঁকে পাঠানো কিছু চিঠি, তাঁর ব্যবহার করা শয্যা, রাইটিং টেবল, চেয়ার সহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, নেতাজির বিভিন্ন ধরনের ছবি সজ্জিত রয়েছে। পর্যটন মরশুমে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু, কর্মীর অভাবে বাড়িটির দেখভাল ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। বর্তমানে এখানে অফিস ইনচার্জ ও একজন পিয়ন মিলিয়ে দু’জন রয়েছেন। অফিস ইনচার্জ বলেন, মিউজিয়াম রক্ষণাবেক্ষণ করতে আরও তিনজন কর্মী দরকার। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।