উখড়ার মহন্ত অস্থল মঠে এখনও সংরক্ষিত রামায়ণের দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
অরূপ সরকার, দুর্গাপুর: দুর্গাপুরের অণ্ডাল থানার উখড়া গ্রামের মহন্ত অস্থল মঠে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে রামায়ণের দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি। ওই পাণ্ডুলিপির ছবিগুলি সোনার জল দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়েছে প্রাচীনকালেই। ওই পাণ্ডুলিপি আজও প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে মঠে। কেবল পাণ্ডুলিপিই নয়, সংরক্ষিত রয়েছে ফরাসি ভাষায় লেখা সম্রাট শেরশাহের জমির দলিল।
মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহন্ত পদবি সাধারণত ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের হয়। মহন্ত একটি উপাধি। এই উপাধি হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রধান বা ওই মঠের প্রধানের জন্য ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে। মহন্ত শব্দটি মহান্ত শব্দ থেকে এসেছিল যার অর্থ মহান ব্যক্তি বা প্রধান ব্যক্তি। তাঁদের একটি মঠ রয়েছে উখড়া এলাকায়। এছাড়াও রয়েছে বর্ধমানের রাজগঞ্জ মহল্লায়। এটি নিম্বার্গ সম্প্রদায়ভুক্ত বৈষ্ণবীয় মঠ। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুর ওই মঠের প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে রাধা ও দামোদরের বিগ্রহ আছে। তিনি উৎকৃষ্ট মন্দির ও অতিথিদের জন্য নিষ্কর মহল ও দেবত্তর ভূমি দান করেন। তারও আগে আগে উখড়া গ্রামে গড়ে ওঠে সোভাদুয়ারা মঠ। ওই মঠের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম শরণ দেবাচার্যী। যা এলাকায় মহন্ত অস্তল আশ্রম নামে পরিচিত বর্তমানে। আশ্রমে রাধা কৃষ্ণের পাশাপাশি অন্যান্য দেবদেবীর বিগ্রহ রয়েছে। আশ্রমে ঝুলন উৎসব হয়। বহু ভক্তদের ভিড় হয় ওই উৎসবে। এছাড়াও সারা বছর এই আশ্রমে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে। আশ্রমের জিনিসপত্রের আবর্জনা থেকে ওই দুষ্প্রাপ্য ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার হয় বলে দাবি করেন আশ্রমের মহারাজ। আশ্রমের বর্তমান মহারাজ মহন্ত নারায়ণ শরণদেব বলেন, আশ্রমের সংগ্রহে রয়েছে আরও বেশকিছু প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য জিনিস। যার মধ্যে অন্যতম হল সোনার জল দিয়ে আঁকা ছবি সহ রামায়ণের সচিত্র পাণ্ডুলিপিটি। ভুজ্য পত্রের উপর সংস্কৃত ভাষায় লেখা ১২০০ পাতার সচিত্র এই পাণ্ডুলিপিটি রামায়ণের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। রামায়ণের একাধিক ছবিও রয়েছে পাণ্ডুলিপিটিতে। তবে পাণ্ডুলিপির লেখক কে তা এখনও জানা যায়নি। গোটা পাণ্ডুলিপিটি সোনার জরি দিয়ে বাঁধানো রয়েছে। পাণ্ডুলিপিটি ৪০০-৪৫০ বছরের পুরনো বলে ধারণা করা হয়। আশ্রমকে দান করা সম্রাট শেরশাহের জমির দলিল রয়েছে। প্রায় ৭০০ বছর আগে ভুজ্য পত্রের উপর ঝামানি অর্থাৎ চাল পুড়িয়ে তৈরি করা কালিতে ফরাসি ভাষায় লেখা হয়েছিল দলিলটি। ওই দলিলে শেরশাহের আমলের সিলমোহর রয়েছে।
আশ্রম সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন শেরশাহের কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন আশ্রমের তৎকালীন মহন্ত প্রয়াত সবুরাম দেবাচার্যের শীর্ষ দয়ারাম শরণ দেবাচার্য্য। কৃতজ্ঞতাবশত সম্রাট শেরশাহ তখন আশ্রমকে বেশকিছু জমি দান করেছিলেন। এটা তারই দলিল বলে জানা গিয়েছে।