• হেলায় পড়ে ‘আরামবাগের গান্ধী’ প্রফুল্লচন্দ্র সেনের বাস্তুভিটে, সংরক্ষণের দাবি স্থানীয়দের
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • রামকুমার আচার্য, আরামবাগ: ‘আরামবাগের গান্ধী’ প্রফুল্লচন্দ্র সেনের বাস্তুভিটেআজ অবহেলিত। আরামবাগের মায়াপুরে রয়েছে কল্যাণ কেন্দ্র। সেখানেই থাকতেন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তৎকালীন সময়ে ওই ঘরে থেকেই দেখা করতেন অনেকের সঙ্গে। বেহাল হতে বসা ওই ঘর ও তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রী সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন অনুরাগীরা। 

    আরামবাগ-কলকাতা রাজ্য সড়কের উপর মায়াপুরে রয়েছে এই কল্যাণ কেন্দ্র। গবেষকরা জানান, প্রফুল্লচন্দ্র সেনের জন্মঅবিভক্ত পূর্ববঙ্গের সেনহাটিতে। প্রফুল্লবাবুর বাবা কর্মসূত্রেপরিবার নিয়ে বিহারে চলে আসেন। পরে পড়াশোনা করতে কলকাতায় আসেন প্রফুল্লবাবু। সেখান থেকেই গান্ধীজির ডাকে হুগলির একটি স্বদেশি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ নেন। পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সংগঠনের কাজ সামলাতে আরামবাগ আসেন। আরামবাগ থানার বর্তমান ডঙ্গলের সাগরকুটিরে গড়ে তুলেছিলেন গোপন আস্তানা। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রফুল্লচন্দ্র সেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী হন। পরে মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর মায়াপুরে গড়ে ওঠে কল্যাণ কেন্দ্র। সেখানেই একটি ঘরে অনাড়ম্বরভাবে প্রফুল্লবাবু থাকতেন। সেই থেকেই প্রফুল্লবাবুকে ‘আরামবাগের গান্ধী’ বলেই সম্মানের সঙ্গে ডাকতেন সকলে। 

    মায়াপুরের ওই কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে এখনও দেখা যাবে প্রফুল্লবাবুর ব্যবহৃত  খাট। চেয়ার, টেবিল সহ অন্যান্য আসবাব। রয়েছে প্রচুর বই। প্রফুল্লবাবুর ওই ঘরে অনুকূল চক্রবর্তী, শান্তিমোহন রায় প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি রয়েছে। প্রফুল্লবাবুর সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর একটি ছবিও কল্যাণ কেন্দ্রের দেওয়ালে এখনও শোভা পাচ্ছে। ঘরে ঢোকার মুখে রয়েছে প্রফুল্লবাবুর মূর্তি। গাছগাছালি ঘেরা পরিবেশে কল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এছাড়া প্রফুল্লবাবুর জন্ম ও প্রয়াণ দিবসও পালন করেন অনুরাগীরা। বিভিন্ন সময় জন প্রতিনিধিরাও ঘুরে দেখেছেন এই কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু এর সংরক্ষণের উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলেই আক্ষেপ স্থানীয়দের।

    প্রফুল্লচন্দ্র সেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস শেঠ বলেন, তৎকালীন সময়ে আরামবাগের বলাইকৃষ্ণ রায় প্রফুল্লবাবুকে থাকার জন্য কল্যাণ কেন্দ্র গড়ে দিয়েছিলেন। এখন সেখানে একটি হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ ক্লিনিক চলে। এই কল্যাণকেন্দ্র স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কিত ইতিহাসের তথ্যকেন্দ্র হতে পারে। নতুন প্রজন্ম জানবে সেই ইতিহাস। তার জন্য সংগ্রহশালা গড়ার পাশাপাশি বৃহৎ আকারে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।

    কল্যাণ কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে থাকা পূর্ণিমা মালিক বলেন, প্রায় ৪০ বছর আমার বাবা প্রফুল্লবাবুর কল্যাণ কেন্দ্র দেখভাল করেছেন। এখান থেকেই প্রফুল্লবাবু মানুষের জন্য কত কাজ করে গিয়েছেন। তাই কল্যাণ কেন্দ্র সংরক্ষণ করে তাঁর স্মৃতিরক্ষারপ্রয়োজন রয়েছে।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)