কাঁথির স্বাধীনতা সংগ্রামী মাস্টারমশাই ঈশ্বরচন্দ্র মাল এখন বিস্মৃতপ্রায়
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কাঁথি: কাঁথি তথা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী, সংগঠক, সবার প্রিয় মাস্টারমশাই, প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত ঈশ্বরচন্দ্র মাল আজ বিস্মৃতপ্রায়। কাঁথি শহরের জুনপুট মোড়ে স্থাপিত তাঁর আবক্ষ মূর্তি বেহাল দশায় রয়েছে। এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগের দাবি উঠেছে।
এবিষয়ে পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান নিরঞ্জন মান্না বলেন, আমরা শীঘ্রই ঈশ্বরচন্দ্র মালের আবক্ষ মূর্তি পরিদর্শন করব। তারপর পুরসভার তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮৮৯সালে কাঁথির সারসা গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র মাল জন্মগ্রহণ করেন। দেড়বছর বয়সে পিতৃহীন হওয়ার পর কাঁথির দামোদরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে চলে যান। কাঁথি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে কলাগেছিয়া ও হলুদবাড়ি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে বহরমপুর কলেজে পড়া শেষ করে কাঁথি হাইস্কুলেই শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯২০সালে দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। ইউনিয়ন বোর্ড বয়কট আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কাঁথি জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় তিনি যোগ দেন। ওই স্কুলের উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বীরেন্দ্রনাথ শাসমল যখন জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন ঈশ্বরচন্দ্র কাঁথি লোকাল বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। সেসময় নানা গঠনমূলক কাজ করেছেন। ১৯৩০সালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় মহকুমা কংগ্রেস কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে তিনমাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩৭সালে রামনগর-এগরা কেন্দ্রের বিধায়ক হন। ১৯৪২সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে ফের কারারুদ্ধ হন। দু’বছর কারাদণ্ড ভোগ করার পর ১৯৪৪সালে মুক্তি পেলেও কলকাতায় দেশপ্রাণের বাড়িতে অন্তরীণ ছিলেন। পরে ১৯৪৬সালে কাঁথি উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হন। বিধায়ক থাকাকালীন কেলেঘাই-বারচৌকা-দুবদা জলনিকাশির সূচনা, বর্ধিত খাজনা রোধ, কাঁথি কলেজে ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তনের মতো নানা কাজ করেছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জলের ব্যবস্থা, সেতু নির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। স্বাধীনতার পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন হাইস্কুল স্থাপনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।