• মেদিনীপুরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধূলিসাৎ হতে বসেছে বিপ্লবীদের আখড়া
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর: বিপ্লবের জেলা মেদিনীপুর। এই জেলার অলিগলিতে বিপ্লবীদের গৌরবময় ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। একসময় এখানেই ছিল বিপ্লবীদের বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের রূপরেখা তৈরি, বোমা বাঁধা ও পিস্তল চালানোর প্রশিক্ষণ সবই হতো সেই আখড়ায়। কিন্তু গোপগড় ইকো-ট্যুরিজম পার্ক এলাকায় ওই আখড়া রক্ষণাবেক্ষণে অভাবে ধূলিসাৎ হতে বসেছে।

    মেদিনীপুরের ইতিহাসবিদরা জানালেন, নবীন প্রজন্মের কাছে বীর-বীরাঙ্গনাদের আত্মবলিদানের কথা তুলে ধরতে এই আখড়া সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নবীন প্রজন্মের অনেকেই এই আখড়ার ইতিহাস জানে না। মেদিনীপুরের ইতিহাস নিয়ে চর্চাকারী অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

    ১৮৬১সালে স্বাদেশিকতার মন্ত্রগুরু ঋষি রাজনারায়ণ বসুর চেষ্টাতেই মেদিনীপুরে জাতীয় আন্দোলন শুরু হয়। সেসময় জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা গঠিত হয়েছিল। এরপর ১৮৯৮সাল নাগাদ মেদিনীপুর শহরে এক গুপ্ত সমিতি গঠিত হয়। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ও ভগিনী নিবেদিতা। এই গুপ্ত সমিতিতে দীক্ষা নেওয়ার জন্য তরবারি ও গীতা হাতে শপথ গ্রহণ করতেন বিপ্লবীরা। শ্রীঅরবিন্দ একসময় সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। সেসময় কলকাতার বিপ্লবীদের প্রস্তাবমতোই মেদিনীপুরের গোপগড় এলাকায় এই আখড়া তৈরি হয়। ১৯০৩সালে ভগিনী নিবেদিতা মেদিনীপুরে এসেছিলেন। সেসময়ই আখড়ার উদ্বোধন হয়। ধীরে ধীরে বিপ্লবীদের কার্যকলাপ বাড়তে শুরু করে। কলকাতার গুপ্ত সমিতির সঙ্গে মেদিনীপুরের গুপ্ত সমিতি সংযুক্ত হয়। তার কয়েকমাস বাদে আখড়ায় শরীরচর্চা, লাঠিখেলা, ডন-কুস্তি-বৈঠক, সাইকেল চালানো, ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। তবে এগুলো ছিল ইংরেজ সরকারের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। আদতে এই আখড়ায় বোমাবন্দুক ও তরবারির মতো ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ১৯০৭সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শহরে আরও চারটি বড় আখড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। মেদিনীপুরের বসন্তমালতী (মীরবাজার), পাটনাবাজার, অলিগঞ্জ, পাহাড়িপুর এলাকায় বিপ্লবীদের আখড়া ছিল। পরবর্তী সময়ে অনুশীলন সমিতি গঠিত হয়। মেদিনীপুরে টাউন স্কুলের কাছে অনুশীলন সমিতির ঘর ছিল। জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সমিতির সদস্য ছিলেন। এরপর মেদিনীপুরের বেশ কিছু বাড়িতেও আখড়া তৈরি হয়। যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। ১৯০৮ সালে বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির পর ব্রিটিশ সরকার এই আখড়া ও সমিতিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা রাহুল দাস বলেন, আখড়ার ইতিহাস বহু মানুষ জানেন না। মেদিনীপুরের বাসিন্দা হিসেবে আমি গর্বিত। তবে গোপগড় এলাকার ওই আখড়া রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার।

    • প্রতীকী চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)