মানবাজার থানা দখলে ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতে শহিদ হন চুনারাম ও গোবিন্দ
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
বাপ্পা রায় মানবাজার
দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন পুরুলিয়ার মানবাজারের দুই বিপ্লবী। তাঁদের ভিটে-মাটি এই দুই বিপ্লবীর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। পুরুলিয়ার তথা তৎকালীন মানভূমের স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা এখনও স্মৃতিতে রয়েছে জেলাবাসীর। ১৯৪২ সালেগান্ধীজির ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন মানবাজারের তরুণ বিপ্লবীরা। সেই লড়াইয়ে নেমে ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতেশহিদ হন মানবাজারের দুই তরুণ বিপ্লবী চুনারাম মাহাত ও গোবিন্দ মাহাত। পুরুলিয়ার লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাত জানান, বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রথম শ্রেণির নেতৃত্ব একে একে গ্রেপ্তার হয়েছিল। পুরুলিয়াতেও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিস। পরবর্তী স্তরের নেতৃত্ব তখন এগিয়ে আসে।
১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভোররাতে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এবং বরাবাজার থানা আক্রমণ করেন বিপ্লবীরা। তার আগে গোপনে বান্দোয়ানের ভজহরি মাহাতর জিতান গ্রামের বাড়িতে তৈরি হয়েছিল পরিকল্পনা। সেখানে ঠিক হয় নিজের নিজের এলাকার থানা আক্রমণ করবেন বিপ্লবীরা। ভজহরি মাহাতর নেতৃত্বে বান্দোয়ান থানায় আগুন লাগানো হয়েছিল। থানা ভস্মীভূত হয়। পদক মাহাত, মদন মাহাত, সাগর মাহাত, ভীম মাহাত, হিরু সিং সর্দারদের নেতৃত্বে বরাবাজার থানায় অভিযান চালিয়েছিলেন বিপ্লবীরা। দু’টি থানাই দখল করে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার যোদ্ধারা। দুই থানায় ব্রিটিশের পতাকা নামিয়ে বিপ্লবীরা তেরঙ্গা পতাকা তুলেছিলেন। জানা গিয়েছে, পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর সকালেএকসঙ্গে বিপ্লবীরা মানবাজার থানা দখলের লক্ষ্যে অভিযান চালিয়েছিলেন। বিপ্লবীদের দেখে গুলি চালায় ব্রিটিশ পুলিস। সেই গুলিতেই থানা চত্বরে ১৮ বছরের দুই তরুণ বিপ্লবী চুনারাম মাহাত ও গোবিন্দ মাহাতশহিদ হন। আরও বহু বিপ্লবী জখম হয়েছিলেন।
চুনারাম ও গোবিন্দ ভারত মাতার দুই বীর সন্তানের আত্ম বলিদানের স্মরণে বর্তমানে মানবাজার থানার সামনে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। সেখানেই প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের বিশেষ দিনটি স্মরণ করা হয়। পরে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ থেকে স্মৃতিরক্ষার জন্য মানবাজার থানা মোড়ে এই দুই বিপ্লবীর মূর্তি উন্মোচন হয়। তবে চুনারাম ও গোবিন্দ মাহাতর কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। তাঁদের পরিবারের কাছেও কোনওছবি ছিল না। মূর্তির গঠন, চেহারা সবটাই দুই বিপ্লবীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে স্কেচ করা হয়েছে।সেখান থেকেই নির্মিত হয় মূর্তি। অবশ্য তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার দুইশহিদের স্মৃতিতে মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় কুমারী সেতুর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে চুনারাম-গোবিন্দ সেতু।