নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল রাঢবঙ্গের। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির গোবিন্দপ্রসাদ সিংহ, অম্বিকানগরের রাজ পরিবারের সদস্যরা সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। জেলার জল-জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত এলাকাগুলিকেই একসময় বিপ্লবীরা আত্মগোপনের ডেরা হিসেবে বেছে নিতেন। ইংরেজদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জেলাবাসী এসব বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে চলত অস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা বাঁধা সহ অন্যান্য গুপ্ত কাজকর্ম। জনশ্রুতি অনুযায়ী, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের অন্তর্গত ঝিলিমিলির জঙ্গলের গুহাতেই ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, বারীন ঘোষের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই সময় অম্বিকানগর রাজপরিবারের সদ্যসরা বিপ্লবীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁদের সাহায্যেই ভারতমাতাকে শৃঙ্খলমুক্ত করার যাবতীয় কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা করতেন এই বীর সন্তানেরা।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে জঙ্গলমহলের জনপদগুলি যথেষ্ট দুর্গম ছিল। ফলে অবিভক্ত বাংলার অন্য এলাকায় ইংরেজরা সহজে যাতায়াত করতে পারলেও জঙ্গলমহল তাদের কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল। তাছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ব্রিটিশরা এই জঙ্গলঘেরা বিস্তীর্ণ এলাকায় এড়িয়ে যেত। ফলে বিপ্লবীদের পক্ষে জঙ্গলমহল অনেকটাই নিরাপদ আশ্রয়ের মতো ছিল। সেই সময় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের সংযোগস্থলে থাকা ঝিলিমিলিতে কোন কোন বিপ্লবী আত্মগোপন করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও ক্ষুদিরাম বসু যে এখানে পা রেখেছিলেন তা অনেকেই গবেষণা করে জেনেছেন। ১৯০৮ সালের আগস্টে ফাঁসির মঞ্চে ওঠার কিছুদিন আগেই তিনি ঝিলিমিলি ঘুরে গিয়েছিলেন বলে ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন। অম্বিকানগর রাজবাড়ির সদস্য রাইচরণ ধবলদেব স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বিপ্লবীদের গোপন আস্তানায় জল, খাদ্যদ্রব্য সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগানের ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও জানা যায়।
ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, রাজপরিবারের সাহায্যেই ক্ষুদিরাম সহ অন্যান্য বিপ্লবীরা পাহাড়ের গুহায় থাকতেন। ঝিলিমিলি এলাকার ছেন্দাপাথরের গুহার মধ্যেই বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা বাঁধার কাজ চলত। বিশেষ এক ধরনের বোমাও ঝিলিমিলির ডেরায় তৈরি হতো। তা দিয়ে বহু ইংরেজকে পরবর্তীকালে নিকেশ করা হয়। কয়েকবছর আগে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি তথা প্রশাসনের উদ্যোগে ছেন্দাপাথরে শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তি, শহিদ বেদি ও উদ্যান তৈরি হয়েছে। তবে ওই এলাকাকে আরও কিছুটা সাজিয়ে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
তাঁদের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পদধূলিধন্য ঝিলিমিলি এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে তামাম অঞ্চলের উন্নয়ন হবে। এলাকায় নতুন নতুন হোটেল, হোম স্টে গড়ে উঠবে। ফলে ওই অঞ্চলের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। তবে ঝিলিমিলির বেশিরভাগ এলাকা বনদপ্তরের। ফলে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার আগে সরকারি ভাবে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধিও জরুরি। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হবে বলে প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। -নিজস্ব চিত্র