আদালতের মধ্যে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
শুভদীপ পাল, সিউড়ি: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বীরভূম জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। বন্দেমাতরম স্লোগান তুলে আদালত চত্বরে উড়িয়েছিলেন জাতীয় পতাকা। দুবরাজপুর মুন্সেফ আদালতেই ১৯৪২সালের সেই ইতিহাস আজও জানেন না অনেকে। তাই দুবরাজপুর আদালত চত্বরে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংক্রান্ত ফলক লাগানোর দাবি তুলছেন জেলার অনেকে।
ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, ১৯৪২সালে ৮আগস্ট ভারতছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে মহাত্মা গান্ধী সহ জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই জেলাতেও আন্দোলনের ডাক দেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা লালবিহারী সিংহ সহ অন্যান্যরা। ১৯৪২সালে ১সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রায় ৫০০জন স্বাধীনতা সংগ্রামী মিছিল করে দুবরাজপুর থানার সামনে আসেন। বন্দেমাতরম সহ নানা স্লোগান দেন। সেখানে থেকে তাঁরা যান দুবরাজপুর মুন্সেফ আদালতে। সেখানে তাঁরা ডাকঘর ভাঙচুর করেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা। দুবরাজপুর মুন্সেফ আদালত আক্রমণ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ইতিহাসবিদদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রমণের আশঙ্কায় দরজা জানালা বন্ধ করে ভিতরে ছিলেন আদালতের কর্মীরা। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভিতরে ঢুকে সেরেস্তায় আগুন লাগিয়ে দেন। কাগজপত্র, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, পাশের পুকুরে ফেলে দেন। এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে নড়িয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুবরাজপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল মিলিটারি। পাশাপাশি ব্রিটিশরা দুবরাজপুর এবং হেতমপুরের উপর ১০হাজার টাকার জরিমানা চাপিয়েছিল। এর পাশাপাশি ৫০জনকে গ্রেপ্তার করে ‘দুবরাজপুর হাঙ্গামা’ নামে একটি কেস রুজু করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৫জন শাস্তি পেয়েছিলেন ।
ইতিহাসবিদ তথা সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পার্থশঙ্খ মজুমদার বলেন, ১সেপ্টেম্বর দুবরাজপুর আদালতে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, ২৮সেপ্টেম্বর পতাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছিল। ওইদিন সৌরেন্দ্রনারায়ণ সেন এবং শ্রীপতি পাতরের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০জন মিছিল করে আসেন এবং মুন্সেফ কোর্ট ও ডাকঘরে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু এই ইতিহাস জেলাবাসীর অনেকে জানেন না। তাই এই ইতিহাসকে ধরে রাখতে দুবরাজপুর আদালত চত্বর কিংবা দুবরাজপুর শহরে ফলক লাগানো উচিত।
দুবরাজপুরের বাসিন্দা শান্তনু দাস, বিজয় দাস বলেন, নিজেদের ইতিহাস মনে রাখতে হবে আমাদের। তাই দুবরাজপুরে যে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল তার একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা উচিত। যেখানে ওই আন্দোলনের ইতিহাস লেখা থাকবে। কেবল দুবরাজপুর নয়, জেলার যে যে এলাকায় স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল সেখানেই এই ধরনের স্মৃতিসৌধ থাকা উচিত। -নিজস্ব চিত্র