ক্ষুদ্রতম জাতীয় পতাকা তৈরি করে তাক লাগালেন বরাকরের অভিষেক
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: শতাব্দী প্রাচীন বাড়ি। রীতিমতো পেল্লাই। বানিয়ে ছিলেন সেই সময়ের নামজাদা মিষ্টির কারিগর গোলক মোদক। বরাকর বাজারে তাঁর একটা মিষ্টির দোকান ছিল। আজ সেই বাড়ির জীর্ণদশা। ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নিয়েই বাস করেন গোলকের বর্তমান প্রজন্ম। সেই বাড়ির জীর্ণ কুঠিরে এলইডি বাল্ব ও সিজার ব্লেডকে সঙ্গী করে দেশের ক্ষুদ্রতম পতাকা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন অভিষেক মোদক। বেশ কয়েকদিনের নিরলস পরিশ্রমের পর টুথপিকের উপর বানিয়েছেন এক মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের একটি জাতীয় পতাকা। অভিষেকের দাবি, এটিই দেশের ক্ষুদ্রতম জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার আগের দিন কাজ শেষ হয়েছে। এবার তিনি গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ডে আবেদন করবেন।
দেশজুড়ে হর ঘর তিরঙ্গা অভিযানের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিভিন্ন স্টেশন ও সরকারি ভবনে উড়ছে সুদীর্ঘ জাতীয় পতাকা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত তিরঙ্গা র্যালি হচ্ছে। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেশ যখন জাতীয়তা বোধে ভাসছে তখন বরাকরের অভিষেকও নিজের দেশভক্তির নজির তুলে ধরেছেন ক্ষুদ্রতম জাতীয় পতাকা বানিয়ে। অভিষেকের বাবা রঞ্জিত মোদক ছোট একটি হোটেল চালান। বাড়িতে ঢুকলেই বোঝা যায় আর্থিক দারিদ্রতার ছাপ কতখানি গভীর। বাড়ির বাইরে ত্রিপল টাঙিয়ে রান্না করছেন মা আন্না মোদক। সিঁড়ির তলার এক চিলতে ঘরেই অভিষেকের ‘ওয়ার্কশপ’। মাইক্রো আর্টের শিল্পীর সরঞ্জাম বলতে একটি তুলি ও একটি বিশেষ ব্লেড। এর আগেও তাঁর হাত দিয়ে উঠে এসেছে দেশাত্ববোধের নিদর্শন। তিনি চালের উপর জাতীয় পতাকা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের উপর নেতাজীর মূর্তি ফুটিয়ে তুলে বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। অতি ক্ষুদ্র অথচ নিখুঁত কাজ করতে অভিষেক নেননি কোনও প্রশিক্ষণ। সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই শিখেছেন মাইক্রো আর্টের কাজ।
আসলে, মোদক পরিবারের এই উত্তরসূরির নেশাই হল মাইক্রো আর্ট। অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স করার পরও মেলেনি চাকরি। কস্ট ম্যানেজমেন্টের উপর একটি কোর্সও করছেন। যদি চাকরি পাওয়া যায়! কিন্তু জোটেনি। তাঁর উপর দায়িত্ব অনেক। বাবার বয়স হয়েছে। বোন বড় হচ্ছে। সংসারে হাল তাঁকেই ধরতে হবে। আর্থিক উপার্জনের রাস্তা না খুললে অচিরেই শিল্পীর শিল্পসত্ত্বা হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে। অভিষেক মোদক বলছিলেন, ‘৫০ সেকেন্ডের মধ্যে চানা ডালের মধ্যে শিবলিঙ্গ তৈরি করে ইন্ডিয়া বুকে রেকর্ড তৈরি করেছি। এবার লক্ষ্য গিনিস বুকে নাম তোলা। কিন্তু আক্ষেপ একটাই, এখনও একটা চাকরি হল না।’