নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোটার তালিকার গরমিলের অভিযোগ প্রথম শোনা গিয়েছিল তাঁর গলাতেই। আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বিহারের মতো বাংলাতেও বৈধ ভোটারদের উপর স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের (এসআইআর) কোপ নেমে আসবে। সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। এমনকী গোটা প্রক্রিয়ায় আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তির দাবিও তুলেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, বিহারে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনে যদি কারও নাম বাদ যায়, তবে বৈধ নথি হিসেবে গণ্য হবে আধার কার্ড। শীর্ষ আদালতের এই অন্তর্বর্তী নির্দেশে তাই খুশি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বেহালায় ‘মধ্যরাতের স্বাধীনতা’ শীর্ষক তৃণমূলের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘আজকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিহার স্বস্তি পেয়েছে, বাংলাও পাবে। একটা রাজ্য পেলে অন্য রাজ্যও পাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশকে কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের জয় হিসেবেই দেখছে রাজ্যের শাসকদল। নেত্রী নিজেও বলেছেন, ‘ভোটার তালিকায় গরমিলের বিষয়টি সর্বপ্রথম তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তুলে ধরেছিলাম গত ফেব্রুয়ারি মাসে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সভায়। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলাম বাংলার ভোটারের এপিক নম্বর রয়েছে হরিয়ানা, গুরগাঁও, রাজস্থান সহ একাধিক রাজ্যে।’ মমতার সাফ কথা, এসআইআর আসলে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত। এর মাধ্যমে বিজেপি আসলে এনআরসি কার্যকর করতে চাইছে। সাধারণ মানুষকে তাঁর আশ্বাস, ‘আমরা কারও স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে দেব না। যতদিন বেঁচে থাকব, লড়াই চালাব। এটা অধিকারের লড়াই। দেশকে বাঁচানোর লড়াই।’ এদিন কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানেও ভিন রাজ্যে বাংলার মানুষের হেনস্তার বিরুদ্ধে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা দেশের নাগরিক নয়, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু বাংলা বললেই অযথা সমস্যায় পড়তে হবে, সেটা যেন না হয়।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে উচ্ছ্বসিত অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তো সরাসরি জানিয়েছেন, ‘আজ বিহার এসআইআর ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আশার আলো দেখাচ্ছে। এটা প্রথম বড় পদক্ষেপ।’ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের তোপ, ‘বিজেপি ও তার সঙ্গীদের মুখোশ খুলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’ এসআইআর বাতিলের দাবিতে এদিন কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনও। তবে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার মতে, বিরোধীদের মিথ্যা প্রচারের পর্দাফাঁস হয়েছে। তাই ছোট বিষয় নিয়ে তারা ‘নৈতিক জয়ের’ দাবি করছে।