• স্বাধীনতা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ আগস্ট ২০২৫
  • প্রবীর ঘোষাল

    উইনস্টন চার্চিল মনে করতেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার যোগ্য নয়। ব্রিটিশ সরকারের এক সময় ভারত সচিব ছিলেন লর্ড পর্কেনহেড। তিনিও তাই বিশ্বাস করতেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার কতটা যোগ্য তা বিচার-বিবেচনা করতে তিনি সাতজন সাহেবের একটি কমিশনকে ভারতে পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি ভারতীয় নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা করে তো চিৎকার করছো, তোমরা সবাই একমত হয়ে একটা সংবিধান রচনা করতে পারবে? ইতিহাস বলছে, কংগ্রেস নেতারা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

    চার্চিল যা বলেছিলেন: If independence is granted to Indis power will go to the hands of rascals, rouges…. They will fight among themselves for power, India will lost in political squabble.

    ইংল্যান্ডের কনজারভেটিভ পার্টির দাপুটে নেতা, বিশ্বের নামকরা রাজনীতিবিদ চার্চিল কোন সময় এসব কথা বলেছিলেন? ১৯৩০-৩১ সালের কথা। ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন তখন তুঙ্গে। একদিকে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন। অন্যদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ইংরেজ ভারত ছাড়ো কর্মসূচি নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল। ঠিক সেই সময় উত্তরপ্রদেশের কানপুরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হয়। ভয়াবহ সেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় বহু মানুষের প্রাণ যায়। এমন পরিস্থিতিকেই টার্গেট করে, ভারত সম্পর্কে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য উড়ে আসে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে।

    স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনের বীর যোদ্ধাদের লড়াইকে কোনওভাবেই খাটো করা যাবে না। তাঁদের অবদান এবং আত্মত্যাগ ভারতবাসী কোনওদিন অস্বীকার করতে পারবে না। যাঁরা বলেছিলেন, আমাদের স্বাধীনতা ভিক্ষার মাধ্যমে এসেছে, তাঁরাও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

    কিন্তু চার্চিল ভারতের স্বাধীনতা সম্পর্কে যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, আজকের দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে তা অনেকটাই প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে না? আমাদের স্বাধীনতা নয় নয় করে ৭৮ বছরে পা রাখল। দেশের মানুষের চাহিদা এবং আবেগকে মূল্য দিতেই আসমুদ্র হিমাচল জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বহু ব্যক্তি স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মবলিদান দিয়েছেন। বাংলা ছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে সামনের সারিতে। প্রতিবাদী হিসাবে বাঙালিদের সুনাম আজও অটুট।

    রাজনীতির কুশীলবদের কল্যাণে স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্বাধীনতার সেভাবে বিকাশ যে ঘটেনি, তা কী করে অস্বীকার করা যায়? আজও জাতপাতের লড়াই চলছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছে। শিক্ষা সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। অথচ, চার্চিলের কথায়, ক্ষমতালোলুপ রাজনৈতিক শক্তিই দেশের সর্বনাশ করবে। আমরা তো পদে পদে টের পাচ্ছি, কায়েমী স্বার্থে মানুষের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিচ্ছে কারা। স্রেফ ক্ষমতা ভোগ করতে তারা দেশকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিতেও পিছপা নন।

    আজ তো ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি নিয়েও রাজনীতির কারবারীরা টানাটানি করছে। এমনকি ভোটাধিকারের মতো পবিত্র অধিকারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকাররক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এটা কি কোনও স্বাধীন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে কাম্য?
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)