• স্বাধীনতার আঁতুড়ঘর পুরুলিয়ার ‘শিল্পাশ্রম’
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ আগস্ট ২০২৫
  • সব্যসাচী চট্টরাজ

    ১৯২১—২০২৫ আশ্রমের শতবর্ষ কবেই পার হয়ে গিয়েছে। কোনও মতে মাথা গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আশ্রমের ভগ্নপ্রায় বেশ কয়েকটি ঘর। তবু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারি সাহায্য নিতেও নারাজ। স্বাধীনতার আঁতুড়ঘর পুরুলিয়ার ‘শিল্পাশ্রম’-এ একসময় মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বোস থেকে শুরু করে বহু বিপ্লবী এসেছেন। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের ভয়ে আত্মগোপন করে এখানে চলত বৈঠক। শুধু জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয় দেশের বিভিন্ন জেলার বিপ্লবীদের ডেরা ছিল পুরুলিয়ার এই শিল্পাশ্রম। সীমানা প্রাচীর কবেই ভেঙ্গে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় কোনও মতে ধুক ধুক করে চলছে শিল্পাশ্রম। বেঁচে আছে আশ্রমের বেশ কয়েকটি প্রাণ।

    বর্তমানে শিল্পাশ্রমের তত্বাবধানে রয়েছেন লোক সেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বোস সহ বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যে এই শিল্পাশ্রমে আনাগোনা ছিল, সুশীলবাবুর ছোট্ট কুঠুরীতে রয়েছে সেসব ছবির ভিড়। আশ্রমে ছোট ছোট অনেকগুলো ঘর রয়েছে, যেখানে বিপ্লবীরা এসে থাকতেন। সেখানে রয়েছে সেইসময়কার ব্যবহৃত চরকা। এখন সেই ঘরগুলো তালা বন্ধ রয়েছে।

    দেশে স্বাধীনতা লাভের বহু আগের কথা প্রসঙ্গে সুশীলবাবু জানান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে পুরুলিয়ার শিল্পাশ্রম জোড়ে ১৯২১ সালে। সেসময় গান্ধীজি যখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তখন তাঁর বার্তা ছিল যে যা পেশায় আবদ্ধ আছেন তা ছেড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। পুরুলিয়া আদালতে ওকালতি করতেন অতুল চন্দ্র ঘোষ। উনি তাঁর স্ত্রী লাবণ্যপ্রভা ঘোষ এবং ছেলেমেয়েদের ছেড়ে সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেমে পড়েন। তখন নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পুরুলিয়ায় তিনি কাজ শুরু করেন। অতুলবাবু তখনই পুরুলিয়ায় গঠন করেন শিল্পাশ্রম। মানভূম জননী লাবণ্যপ্রভা ঘোষ মারা যাবার পরে লোকসেবক সংঘের সচিবের পদে রয়েছেন সুশীল মাহাতো। বর্তমানে তাঁর বয়স পঁচাত্তরের দোরগোড়ায়। সরকারের কাছে সাহায্য নেবেন না বলে বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করেননি। তিনি একবার রাজী হলে সরকারের তরফে শিল্পাশ্রমটিকে সংস্কার করে ঐতিহাসিক পর্যটন স্থল তৈরি করা যেতে পারে।

    কিন্তু সুশীলবাবুর কথায় যদি সরকারি সাহায্য নিই, শিল্পাশ্রমের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা হবে। সরকারি সাহায্য নেওয়া আমাদের সংঘের নীতি বিরুদ্ধ। স্থানীয় সাধারণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই পারে এবং আমরা তা গ্রহণও করব। শিল্পাশ্রম সম্পর্কে সুশীলবাবুর সংযোজন: আমি শুনেছি সে সময় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এখানে এসেছিলেন। এছাড়াও জ্যোতি বসু একাধিকবার এই শিল্পাশ্রমে এসে উঠোনে বসে বৈঠক করে গেছেন। বিহার থেকে রাজেন্দ্রপ্রসাদও পুরুলিয়ার এই শিল্পাশ্রমে আসতেন। এখন সেসব অতীত। কালক্রমে পুরুলিয়ার শিল্পাশ্রমের এখন ভগ্নদশা। সরকারি সাহায্য ছাড়া সাধারণ মানুষ কখন এগিয়ে আসবে স্বাধীনতা সংগ্রামের আঁতুড়ঘর শিল্পাশ্রমকে বাঁচিয়ে রাখতে তা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)