অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: মাত্র চার সেন্টিমিটার লম্বা দেশলাই কাঠি। আর তাতেই ফুটে উঠেছে বাঘাযতীন, প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরাম বসু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিনয়-বাদল-দীনেশ সহ ৩৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মুখাবয়ব। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মাইক্রো আর্টের মাধ্যমে এমনই অভূতপূর্ব শিল্পকর্ম তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন হাওড়ার চিত্রশিল্পী প্রণব নন্দী।
দক্ষিণ হাওড়ার হাঁসখালি পোলের বাসিন্দা প্রণব। দেশলাই কাঠির উপর আঠার প্রলেপ দিয়ে তাতে জাতীয় পতাকার প্রতিটি রঙ ব্যবহার করেছেন তিনি। বিপ্লবীদের মুখের পাশাপাশি রয়েছে চার খানা অশোক চক্র। প্রণব জানান, এই কাজ সম্পূর্ণ করতে তাঁর চার দিন সময় লেগেছে। কোনও ধরনের মাইক্রোস্কোপিক গ্লাস ছাড়াই পুরোটা খালি চোখে করেছেন তিনি। মাইক্রো আর্টের এই শিল্পকলা প্রণব এই প্রথম করছেন না। এর আগে সুজি, পোস্তোর দানা ও মুসুর ডালের উপর তিনি প্রাক্তন প্রয়াত বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম লিখেছিলেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গাও করে নিয়েছিল সেই আর্ট ওয়ার্ক। রাষ্ট্রপতি প্রণববাবু স্বয়ং নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন সেই মুসুর ডালের দানা। পাশাপাশি, সরষের দানার উপর পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেও তাক লাগিয়েছিলেন প্রণব। তিনি বলেন, “মাইক্রো আর্টে চোখের উপর ভীষণ চাপ পড়ে। চোখের পাওয়ার বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তা বন্ধ রেখেছিলাম। তবে আগামী দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে আরও কাজ করতে চাই।”প্রসঙ্গত, মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই ছবি আঁকা শুরু করেন প্রণব। প্রথাগত তালিম না থাকলেও বর্তমানে বছর ৩২-এর এই যুবক ছবি আঁকাকেই নেশা ও পেশায় পরিণত করেছেন। বাবা গাড়ির চালক হওয়ায় সংসারে আর্থিক অনটন থাকায় আর্ট কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েও আর পড়তে পারেননি। সংসার চালাতে কলেজের পড়াশোনা ছাড়তে হয় তাঁকে। প্রণব প্রাইভেটেই আঁকা শিখেছেন। এর আগে আঁকাতে বহু জায়গা থেকে সম্মান পেয়েছেন শিল্পী। যেমন ভারত-বাংলাদেশের আঁকা প্রতিযোগিতায় বেস্ট পেন্টিং অ্যাওয়ার্ড, দিল্লিতেও আঁকা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার। এছাড়া ঝাঁসি থেকেও ভালো আঁকার পুরস্কার পেয়েছেন। সম্প্রতি ইতালির ম্যুরাভেরা মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে প্রণবের ছবি। আর্থিক অনটন থাকলেও আগামী দিনে সাফল্যের শীর্ষে উঠতে চান শিল্পী।