• দাবিদারহীন মোষ-গোরু, রাস্তায় ঘুরলেই করা হবে বাজেয়াপ্ত ঠাঁই হবে খোঁয়াড়ে, নয়া পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন শিল্পাঞ্চলবাসী
    বর্তমান | ১৬ আগস্ট ২০২৫
  • সুমন তিওয়ারি, আসানসোল: জাতীয় সড়ক হোক বা রাজ্য সড়ক, জিটি রোড হোক বা পাড়ার ঢালাই রাস্তা তাদের দখলদারিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। অন্ধকারে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তারা যেন যমদূত।কখনো তাদের বাঁচাতে গিয়ে হঠাৎ বাইক বা গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে। কখনো আবার পিছন থেকে এসে অন্য গাড়ি ধাক্কা মেরেছে। বর্ষাকালে তাদের মলত্যাগ রাস্তাকে আরও পিচ্ছিল বানিয়ে দেয়। যার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। শিল্পাঞ্চলে দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তার মধ্যে থাকা অনিয়ন্ত্রিত মোষ ও গরুর উৎপাত। এই উৎপাতে সাক্ষী আসানসোল ও দুর্গাপুর দুই মেগাসিটির বাসিন্দারাই হঠাৎই যেন বেড়ে গিয়েছে তাদের সংখ্যা। মালিকানাহীন এই মোষ গরুগুলি সারাদিন ধরে রাস্তার ধারে থাকা ঘাস খেয়ে বেড়ায়। কখনও আবার মাঝ রাস্তায় বসে পড়ে বিশ্রাম নেয়। গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার কেউ থাকেনা। আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত জিটি রোডের রাস্তা কার্যত তাদের দখলে চলে গিয়েছে। বারবার দুর্ঘটনার পরেও নিয়ন্ত্রণ আসছে না। একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে ১৯ নাম্বার জাতীয় সড়কের মত রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তাতেও। আর সালানপুর থানা রূপনারায়ণপুর তো হয়ে উঠেছে রেলসহ চিত্তরঞ্জনের 'সেল্টার হাউস'। চিত্তরঞ্জনে যত অবৈধ খাটাল ও বসতি ছিল তা রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করে দিয়েছে। তারাই সালানপুর থানা রূপনারায়নপুরের হিন্দুস্থান কেবলসের   জমি ও অন্যান্য সরকারি জমি বেপরোয়া ভাবে দখল করে বসতি গড়ছে।অনেক ক্ষেত্রেই রূপনারায়নপুরের শাসক দলের নেতাদের একাংশের মদতে আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে কেবেলস এর কোয়ার্টারও দখল করছে। এমনকি কোয়াটারে রাতারাতি গজিয়ে উঠছে খাটাল। একদা মানুষ থাকার পক্ষগুলিতে থাকছে মহিষরা। মোষদের কোয়ার্টার দখলের থেকেও মানুষের উদ্বেগের কারণ তাদের রাস্তা দখল। রূপনারায়ণপুর থেকে সামডি রাস্তা, রূপনারায়ণপুর ডাবর মোড় থেকে চিত্তরঞ্জন যাওয়ার রাস্তায় এই উৎপাত সবচেয়ে বেশি। খতিয়ে দেখলে দেখা গিয়েছে, মূলত খাটাল মালিকরাই এর জন্য দায়ী। এতদিন মোষগুলিকে তারা চরাতে নিয়ে যেত। বিভিন্ন জায়গায় ঘাস খাইয়ে এনে তা গোয়ালে ফিরিয়ে আনতো। এখন সেসবের বালাই নেই। সকাল হলেই দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে তাদের বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। দিনভর বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করে মোষ গোরু নিজেরাই। রাত নামতে ফের গোয়ালে ফিরিয়ে আনা হয় তাদের। রাতে আরেক পস্থ দুধ সংগ্রহ করা হয়। এইভাবে গো-মাতাদের মালিকরা শুধুমাত্র দুধ সংগ্রহ করার জন্যই তাদের খাটালে ফিরিয়ে আনছে বাকি সময় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে রাস্তাতেই। অবশেষে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে পথ দেখানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে রূপনারায়নপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। সালানপুর ব্লকের এই পঞ্চায়েত রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়ি সহযোগিতায় শুরু করেছে ব্যাপক প্রচার অভিযান। মাইকে করে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হচ্ছে, 'রাস্তার মধ্যে দাবিদার হীন মোষ বা গরু পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে খোয়াড়ে। মালিক মোষ বা গরু প্রতিপালন করলে তাকে আগলে রাখার দায়িত্ব তারই। তাদের এই অবহেলাতেই রাস্তায় বাড়ছে দুর্ঘটনা তাই পঞ্চায়েতের এই পদক্ষেপ। বিভিন্ন জায়গায় টোটোর মাধ্যমে এই মাইকিং শিল্পাঞ্চলে সাড়া ফেলেছে। বাসিন্দাদের দাবি আসানসোল দুর্গাপুর এর মতো মেঘা সিটিতেও এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। তাহলে শায়েস্তা হবে একশ্রেণীর অসাধু খাটাল দুধ ব্যবসায়ী। 
  • Link to this news (বর্তমান)