চিকিৎসার জন্য অসুস্থ সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে হাজির মা হনুমান...
আজকাল | ১৬ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'এই হাসপাতালে সমস্ত পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়'। গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরতে ঘুরতে হয়ত কোনওদিন চোখে পড়ে গিয়েছিল সরকারি হাসপাতালে লাগানো এই পোস্টারটি। আর কোলের সন্তান আহত হতেই সটান তাকে নিয়ে সেখানেই হাজির হয়ে গেলেন উদ্বিগ্ন মা। তবে এই 'মা' কোন সাধারণ 'মা' নয়। মানবদের পূর্বপুরুষ বানরকুলের অংশ ,হনুমান।
আহত সন্তানকে নিয়ে কোলে করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য চলে আসার সেই দৃশ্য এখন সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার স্বাধীনতা দিবসের সকালে মুর্শিদাবাদের সুতি -১ ব্লকের বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ।
মুর্শিদাবাদ জেলার প্রত্যন্ত বহুতালি গ্রামে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা ছাড়াও হাড়ুয়া এবং সংলগ্ন বীরভূম জেলার একাধিক গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসেন। হাসপাতালের ওপিডি-তে প্রায় সমস্ত রকমের ছোটখাটো চিকিৎসা মেলে। তবে রোগী যদি গুরুতর কোনও চোট -আঘাত বা অসুস্থতা নিয়ে আসেন তাহলে ডাক্তারবাবুরা তাঁদের জঙ্গিপুর হাসপাতালে রেফার করে দেন।
শুক্রবার সকালে যখন গোটা দেশ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ উদযাপন এবং পতাকা উত্তোলনে ব্যস্ত ছিল ঠিক সেই সময় সকলের নজরে পড়ে হাসপাতালে দরজায় দু'টি পূর্ণবয়স্ক এবং একটি অল্প বয়স্ক হনুমান বসে রয়েছে। ওই দলের মা হনুমানের কোলে একটি অসুস্থ বাচ্চা ছিল। কাতর দৃষ্টিতে মা হনুমান যেন সকলের কাছে প্রার্থনা করছিল তার কোলে থাকা অসুস্থ বাচ্চার জন্য যেন একটু চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
সেই সময় হাসপাতালে উপস্থিত বেল্লাল শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন,' সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে আমাদের সকলকেই টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। আমরা দেখলাম হনুমানের দল হাসপাতালে প্রধান ফটক পার করে ভেতরের না ঢুকে দরজার সামনেই বসে ছিল। ওই দলে মা হনুমানের কোলে থাকা বাচ্চার শরীরে কিছুর আঘাত ছিল। সম্ভবত হনুমানের বাচ্চাটি গাছ বা অন্য কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে কিছুটা আহত হয়েছিল এবং তার শরীর দিয়ে অল্প রক্ত ঝরছিল।' তিনি বলেন, 'কাতর দৃষ্টিতে মা হনুমান হাসপাতালের সকলের কাছে যেন আবেদন করছিল তার সন্তানের জন্য যেন একটু চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। '
হাসপাতালের দরজায় হনুমানদের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য বসে থাকতে দেখে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে যায়। অনেকেই এই দৃশ্য নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে নিতে থাকেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যায় ,অসুস্থ সন্তানের পাশে প্রচুর লোককে জড়ো হতে দেখে একটি পুরুষ হনূমান কিছু লোককে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ।
আহত সন্তানকে কোলে নিয়ে হনুমানকে হাসপাতালে দরজায় অপেক্ষা করতে দেখে হাসপাতালের কর্মীদেরও দয়া হয়। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কর্মী জানান,' আমাদের হাসপাতালে মানুষের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এখানে পশু চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। তা সত্ত্বেও আমরা অসুস্থ হনুমান বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে দেখে তার চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। '
তিনি জানান,' আমরা হনুমানের কোল থেকে তার বাচ্চাটিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে মা এবং দলের দু'টি হনুমান আমাদের দিকে বারবার দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসছিল। সেই কারণে আমরা দূর থেকে বাচ্চা হনুমানটির গায়ে ওষুধ ছড়িয়ে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। '
সূত্রের খবর,মানুষের দেহে ছোটখাট কোনও আঘাত লাগলে চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ ব্যবহৃত হয় সেই ওষুধই অল্প কিছুটা হাসপাতালের কর্মীরা ওই হনুমানের বাচ্চার গায়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এরপরই হনুমানের ওই দলটি দ্রুত হাসপাতালের মূল ফটক থেকে সরে গিয়ে হাসপাতালে চত্বরে থাকা গাছে গিয়ে উঠে পড়ে।
হাসপাতালে হনুমানকে তার বাচ্চা কোলে দেখে সানা নামে এক কিশোরী তার মাকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে বসে,' আচ্ছা মা, ওরা কি বাংলা পড়তে পারে? কী করে হনুমানগুলো জানল এখানে এলে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে?'