শুভেন্দু 'ঘনিষ্ঠ' রাজ্য বিজেপি সম্পাদকের সদলে তৃণমূলে যোগ
প্রতিদিন | ১৬ আগস্ট ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতা দিবসেই খাস দক্ষিণ কলকাতায় জোর ধাক্কা খেল বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ রাজ্য বিজেপির সম্পাদক তথা জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরি-সহ প্রায় তিনশো গেরুয়া কর্মী। একইসঙ্গে একই মঞ্চে সিপিএমের লালঝান্ডা ছেড়ে জোড়াফুলের পতাকা নিলেন ১৭জন ডিওয়াইএফআই নেতা-সহ শতাধিক কর্মী।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি ও বিধায়ক দেবাশিস কুমারের হাত ধরে জোড়াফুলে আসা সঙ্ঘমিত্রা ও বামকর্মীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। টানা ১২ বছর বিজেপির নানা পদ ও দায়িত্ব সামলানো সঙ্ঘমিত্রা তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে বলেন, ‘‘এতদিন ভাড়া বাড়ি ছিলাম, এবার নিজের বাড়ি এলাম। বিজেপি করা সত্ত্বেও আমি সাধারণ মানুষের জন্য এতদিন যখনই কোনও কাজ নিয়ে গিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে তা করে দিয়েছেন তৃণমূলের কাউন্সিলর, বিধায়ক-মন্ত্রীরা। কিন্তু বিজেপির পদাধিকারী হয়েও মানুষের জন্য রাজ্য থেকে নির্বাচিত পদ্মফুলের বহু সাংসদের দরজায় দরজায় ঘুরেও এক ইঞ্চি সাহায্য করতে পারিনি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের উন্নয়নের মূলস্রোতে থাকতে ও মানুষের পাশে আরও বেশি করে থাকব বলেই তৃণমূলে এলাম।’’
হাজরা রোডে তৃণমূলের সভায় মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য শুক্রবার সঙ্ঘমিত্রাদের তৃণমূলে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘বাংলার অস্মিতা রক্ষায় বিজেপি ছেড়ে আরও বহু মানুষ তৃণমূলে আসছেন, সবার কাছেই গেরুয়া শিবিরের বাংলা ভাষার অসম্মান ও অপমান আজ তীব্র হয়ে উঠছে।’’
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসে রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের তীব্র গোষ্ঠী-কোন্দল ও বাংলার উন্নয়নের বিরোধিতা করে নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন সঙ্ঘমিত্রা।
পুরনো দল নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না বলেও বিজেপি নেতাদের গোষ্ঠীবাজির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, ‘‘গত ১২ বছরে চারজন সভাপতি বদল হওয়ায় ভুগছেন পুরনো পার্টিকর্মীরা। রাহুলদার লোকেদের দিলীপদা দায়িত্বে এসে কাজে নেননি। আবার দিলীপদার ঘনিষ্ঠদের সুকান্তবাবু নেননি। আর আমি শুভেন্দু অধিকারীর সাহায্য নিয়ে দল করতাম বলে পার্টির ‘সংগঠন-মন্ত্রী’ অমিতাভ চক্রবর্তী আমায় দক্ষিণ কলকাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা থেকে সরিয়ে চরম অপদস্থ করে হাতে ‘ললিপপ’ ধরিয়ে হাওড়ার পর্যবেক্ষক করা হল। গেরুয়া শিবিরের পরিবেশ একদম ভালো লাগছিল না।’’
এরপরই রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের সাংগঠনিক দক্ষতা ও গুণের উল্লেখ করে সঙ্ঘমিত্রা বলেন, ‘‘তৃণমূলে স্থিরতা ও দায়িত্ববোধ রয়েছে। দলে আছে প্রোফেশনাল অ্যাপ্রোচ। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতা-নেত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা সকলেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশুকে ও উপকারী মনোভাব নিয়ে কথা বলেন। বলতে পারেন, এটা বঙ্গ বিজেপিতে খুবই অভাব।’’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অত্যন্ত নিঃশব্দে বিজেপি ও সিপিএম শিবিরকে ধাক্কা দেওয়া নিয়ে তৎপর ছিলেন দেবাশিস কুমার। এমনকী শেষমুহূর্তে বিরোধী দলনেতা নিজের টিম বাঁচাতে হানা দিতে পারে ভেবে সঙ্ঘমিত্রাকে তাঁর গড়িয়ার বাড়ি থেকে এনে নিজের এলাকায় একটি হোটেলে রেখেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার জেলা তৃণমূল সভাপতি। সূত্রের খবর, পুজোর আগে খাস কলকাতায় আরও এক দফায় রাম-বাম শিবিরে বড়মাপের ভাঙন ধরতে পারে।