স্বাধীনতা দিবসের রাতে স্বস্তির খবর পৌঁছল মালদহের কালিয়াচকে। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পরে বাংলাদেশ থেকে নিজের বাড়ি ফিরলেন রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক আমির শেখ (২৪)। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে রাজস্থানে আটক করে জেল হেফাজতে রাখা হয় এবং পরে বিএসএফের মাধ্যমে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়।
রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ এবং রাজ্য পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম সামাজমাধ্যমে পোস্ট করে আমিরের দেশে ফেরার খবর জানান। তিনি দাবি করেছেন, এই কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবান্ন সক্রিয় ভাবে চেষ্টা করেছে। তার ফলেই আজ আমির নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরেছে।’
পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, আধার কার্ড সহ একাধিক ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছলে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে এবং কলকাতা হাই কোর্টে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন আমির। আমির বলেন, ‘রাজস্থানে আমাকে প্রায় দু’মাস জেলে রাখা হয়। পরে সীমান্তে এনে বিএসএফ গেট খুলে দিয়ে বলে, ডান দিকে গেলে গুলি খাবে, বাঁ দিকে যাও। তারপর থেকেই আমি বাংলাদেশের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।’
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, ঘটনার কথা জানার পরই পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম হাইকোর্টে মামলা করতে সাহায্য করেন। বিষয়টি পৌঁছায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পর্যন্ত। স্থানীয় সাংসদ ইশা খান চৌধুরী বিএসএফ ডিজির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। সব তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ১৫ আগস্ট গভীর রাতে ভারতীয় ভূখণ্ডে ফেরেন আমির। ছেলেকে ফিরে পেয়ে চোখে জল আমিরের দিদিমার। তিনি বললেন, ‘ওকে মারধর করা হয়েছে, কিন্তু অন্তত ফিরে এসেছে, এতেই শান্তি।’
এই ঘটনার পর শনিবার আমিরের বাড়িতে যান স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি কড়া ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘নিজের দেশের নাগরিক হয়েও এক যুবককে অন্য দেশে ঠেলে দেওয়া হল, কেন্দ্র কি দায় এড়াতে পারে?’ যদিও বিজেপির দক্ষিণ মালদা জেলা সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই যুবককে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হত না।’
মালদহের নারায়ণপুরের বছর একুশের ওই যুবক মাস তিনেক আগে রাজস্থানে শ্রমিকের কাজে যান। সেখানে প্রায় একমাস কাজও করেছিলেন। কিন্তু আচমকায় রাজস্থান পুলিশ তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নাম, ঠিকানা, কাগজপত্র দেখতে চাই। কারণ, তিনি বাংলায় কথা বলছিলেন। এমনকী আধার কার্ড, জন্ম সংশাপত্র দেখিয়েও রাজস্থান পুলিশকে খুশি করতে পারেননি আমির, এমনটাই অভিযোগ আমিরের বাবার।