ভিন রাজ্যে মর্মান্তিক মৃত্যু এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের, দেহ আনতে চাঁদা তুলছে গ্রামের লোক ...
আজকাল | ১৭ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে ফের মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদ জেলার এক যুবকের। শুক্রবার দুপুরে চেন্নাইয়ের একটি এলাকায় 'রড বাইন্ডিং'-এর কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল হরিহরপাড়া থানার ধরমপুর অঞ্চলের সুন্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের মোমিন শেখের। তরিদাহত হয়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও সাতজন। আহত ব্যক্তিরাও সকলেই সুন্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তাঁরা চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারই চেন্নাই-এর হাসপাতালে মোমিনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে। এরপর প্লেনে করে দেহটি কলকাতা বিমানবন্দরে আনা হবে। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হরিহরপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। মৃত মোমিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার জন্য গ্রামের বাসিন্দারাই চাঁদা তুলে দেহ চেন্নাই থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছেন বলে জানা গিয়েছে। মৃত ওই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে মোমিন শেখের আরও দুই ভাই রয়েছেন।
মাসখানেক আগে মোমিন এবং তার মেজো ভাই চেন্নাইতে রাজমিস্ত্রি কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের ছোট ভাই বর্তমানে পন্ডিচেরিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। শুক্রবার দুপুর নাগাদ মোমিন এবং আরও কয়েকজন একটি বহুতল নির্মাণস্থলে 'রড বাইন্ডিং'-এর কাজ এবং লোহার পাইপ নির্মীয়মান বহুতলের উপরে তোলার কাজ করছিলেন। সেই সময় ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে থাকা লোহার একটি পোল রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে লেগে যায়।
এই ঘটনায় মোমিন-সহ আরও সাতজন পরিযায়ী শ্রমিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা মোমিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কায়েস মন্ডল নামে মৃতের এক প্রতিবেশী বলেন,'পরিবারের আর্থিক হাল ভাল না হওয়ায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর মোমিন আর পড়াশোনা করতে পারেননি। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন।' তিনি জানান,' মাসখানেক আগে মোমিন ঈদের ছুটিতে শেষবারের মতো বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর নিজের দুই ভাই-সহ গ্রামের আরও কয়েকজন যুবককে নিয়ে চেন্নাইয়ের একটি বহুতল নির্মানস্থলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান।
শুক্রবার দুপুর নাগাদ তাঁরা সকলে যখন সেই নির্মাণস্থলে লোহার রড বাধার কাজ করছিলেন সেই সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনাটি ঘটে।' ওই ব্যক্তি আরও জানান,'কয়েক মাস আগে মোমিন এবং তাঁর আরও দুই ভাই বেশ কিছু লোকের থেকে বড় অঙ্কের টাকা দেনা করে গ্রামে একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন। যাতে তাঁদের মাকে ভালোভাবে রাখা যায়। তিন ভাই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে দ্রুত সকলকে দেনার টাকাও শোধও করে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তারই মধ্যে মোমিনের মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর গ্রামে এসে পৌঁছেছে।' প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে ললিতপুরের গ্রামের বাসিন্দা জনৈক আশিক শেখ চেন্নাইতে কাজ করতে গিয়ে লোহার রড কাটার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। গত মঙ্গলবার চেন্নাইতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় স্বরুপপুর মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম শেখের। এছাড়াও দিন দশেক আগে নওদা থানা এলাকার একই পরিবারের চার বাসিন্দা দিল্লিতে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান। ওই পরিবারের সদস্যরা ফেরিওয়ালার কাজ করতে দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির একটি ঝুপড়ি বস্তিতে তাঁরা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় একটি দেওয়াল চাপা পড়ে ঘুমের মধ্যেই সাতজনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে চারজন নওদা থানা এলাকার বাসিন্দা।