চলন্ত বাসেই 'ওটা' মুখে ঢুকিয়ে দিলেন যাত্রী, কিছুক্ষণ পরেই ঘটল বিপত্তি, নিয়ে যেতে হল হাসপাতালে...
আজকাল | ১৭ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: যাত্রী সেজে বাসে উঠে মাদক মিশ্রিত পানীয় খাইয়ে সর্বস্ব লুট। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাসে। সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন যাত্রী। ধূপগুড়ি বাস টার্মিনাসে বাস দাঁড় করিয়ে তাঁকে সংজ্ঞা ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ধূপগুড়ি হাসপাতালে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ওই এলাকায়।
জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি থেকে একজনের সঙ্গে ওই যাত্রী বাসে উঠেছিলেন। বাসের অন্যান্য যাত্রী এবং কন্ডাক্টর জানান, যতটুকু নজর পড়েছে তাতে দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় যাত্রী ওই যাত্রীর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠেছিলেন। এমনকী সে তাঁর নিজের এবং অপর যাত্রীর ভাড়াও দিয়ে দেন। চলার পথে ফাটাপুকুর এলাকায় বাস দাঁড়ালে সে হঠাৎ নেমে যায়। এরপর বাস যখন জলঢাকা পৌঁছয় তখন অপর যাত্রী জানান তাঁর খুব শরীর খারাপ লাগছে। কন্ডাক্টরকে ডেকে একথা বলতে বলতেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বাস দাঁড় করানো হয় ধূপগুড়ির চৌপথিতে। অসুস্থ ওই যাত্রীকে নামানো হয়। সেই সময় ওই এলাকার ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ কর্মীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। খবর যায় ধূপগুড়ি থানায়। সেখান থেকে আসেন পুলিশ কর্মীরা। তাঁরা এসে দ্রুত ওই যাত্রীকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অসুস্থ ওই যাত্রীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ওই যাত্রীকে কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। যার জেরেই সংজ্ঞা হারান তিনি।
নির্মল রায় নামে বাসের এক যাত্রী বলেন, মনে হচ্ছে নেশার কোনও কিছু খাইয়ে ওই যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হয়েছে। অসুস্থ ওই তরুণের কাছে বোতলে ভরা সবুজ রংয়ের কিছুটা পানীয় পাওয়া গিয়েছে। যাত্রী সেজে ওঠা ছিনতাইকারী ভালোবাসার ভান করে তাকে ওই পানীয় মুখে ঢেলে দিয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি পুলিশ ওই যাত্রীকে তল্লাশি করে তাঁর পকেট থেকে কোনো পরিচয়পত্র বা মোবাইল ফোন পায়নি। যার জেরে সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে যাত্রীর থেকে সর্বস্ব লুট করে বাস থেকে নেমে গিয়েছে ছিনতাইকারী। জানা গিয়েছে, এতটাই শক্তিশালী ছিল ওই মাদক যে যাত্রী নিজের নাম, পরিচয় বা কোনো কিছু বলতে পারছেন না। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছেন।
যদিও মাদক খাইয়ে লুট করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। দূরপাল্লার বাস বা ট্রেনে মাঝেমাঝেই এই ধরনের অপরাধের ঘটনা উঠে আসে। দেখা গিয়েছে, 'শিকার' হিসেবে যেই যাত্রীকে ছিনতাইকারীরা বেছে নেয় তার সঙ্গে আগে ভাল ব্যবহার করে মন জিতে নেয়। ধীরে ধীরে তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। এরপর যাত্রীকে মাদক মিশ্রিত জিনিস অফার করে তারা। সেটা কোনও পানীয় বা সাধারণ মিষ্টিও হতে পারে। যেটা খাওয়ার পরেই যাত্রী বেহুঁশ হয়ে যায়। এরপর মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে মাঝপথে কোথাও নেমে যায় ছিনতাইকারী। যদি নজরে না পড়ে তবে বাকি রাস্তা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় যাত্রা করে ছিনতাইকারীর কবলে পড়া যাত্রী। এরকম বহু ঘটনায় জানা গিয়েছে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছনোর পরেও নিজের আসনে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে থেকেছেন যাত্রী। এরপর আরপিএফ বা অন্য কোনো রেলকর্মীর নজরে আসার পর উদ্ধার করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে।
পুলিশের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি আটকাতে বারবার সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। রেল নিজেও স্টেশনে স্টেশনে এই বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালিয়ে জানায়, অচেনা বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তির থেকে যেন কেউ কিছু না খায় বা পান করে। কিন্তু ঘটনা হল, এই প্রচারের পরেও এই ধরনের দুর্ঘটনার কথা সামনে এসেছে। যেখানে মাদক মিশ্রিত পানীয় বা খাবার খাইয়ে যাত্রীর থেকে সর্বস্ব লুট করে পালিয়েছে ছিনতাইকারীরা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যদি কখনও এই ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ে তবে দেখা যায় গ্যাং হিসেবে ট্রেনে দুষ্কর্ম চালায় এরা। যেখানে একজন বা দুইজন যখন যাত্রীকে মাদক খাওয়ানোর চেষ্টা করে তখন বাকি সদস্য বা সদস্যরা খেয়াল রাখে অন্য কেউ বিষয়টি খেয়াল করছে কিনা।