প্রহরী স্বয়ং গোপীনাথ, জন্মাষ্টমীর ঘটি খেলা ঘিরে কাশীপুর রাসবাটি জমজমাট
বর্তমান | ১৭ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কাঁসার ঘটিটি যদিও সোনার মতো চকচকে। তবুও কতই বা দাম হবে। তবে সে ঘটিটি পাওয়ার পর কৃষ্ণভক্তের মুখ দেখলে মনে হবে, কোটি টাকার লটারি জিতেছেন। এই পবিত্র পাত্র বাড়িতে থাকলে যশ-মান-খ্যাতি-শ্রীবৃদ্ধি ফেরে বলে বিশ্বাস ভক্তদের। তাই কাশীপুর রাসবাটিতে নন্দ উৎসবে উপচে পড়ে ভিড়। এদিনই হয় ঘটি খেলা প্রতিয়োগিতা। তার রেফারি হিসেবে প্রহরায় থাকেন স্বয়ং কৃষ্ণ। তাঁর সামনে বসে নিয়ম মেনে খেলতে হয়।
রাসবাটির মন্দিরের সেবায়েত তুষার দে সরকার ও তাঁর স্ত্রী গোধূলিদেবী জানান, একটি ঘটিতে ছোট আকারের একাধিক চিরকুট রাখা থাকে। তার মধ্যে একটির মধ্যে লেখা থাকে-‘গোপীনাথ’। কাগজগুলি হাত দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে মিলে চিরকুট তোলেন। যাঁর ভাগ্যে গোপীনাথ লেখা চিরকুট ওঠে তাঁকে সেটি দিয়ে দেওয়া হয়। মোট তিনটি কাঁসার ঘটি বিলির নিয়ম। উত্তর কলকাতার কাশীপুরের রতনবাবু রোডে আড়াইশো বছরের প্রাচীন এই রাসবাটি। নন্দ উৎসবের দিন ঘটি প্রতিযোগিতা ঘিরে ভক্তদের মধ্যে থাকে আলাদা উন্মাদনা। তুষারবাবু বলেন, ‘ঘটি প্রতিযোগিতায় প্রধান সাক্ষী স্বয়ং গোপীনাথ (এই বাড়ির কৃষ্ণ)। তাঁর উপস্থিতিতেই হয় প্রতিযোগিতা। খেলা শেষে শুরু হয় নন্দ উৎসব। ঢাক‑ঢোল, কাসর, ডুমরি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সহকারে চলে উৎসব ও পুজো। ফুল‑মালায় সাজেন রাধা‑কৃষ্ণ। বাড়ির কুলদেবতা নারায়ণ শীলার সামনে চলে কৃষ্ণের শত নাম পাঠ ও নামগান।
একসময় ঘটি খেলা হতো অন্য নিয়মে। তখন ভক্তরা কাঁসার ঘটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করতেন। যিনি ঘটি ছিনিয়ে নিতেন তিনি পেতেন সেটির অধিকার। কিন্তু এখন সে প্রথা মানা হয় না। হয় লটারি। প্রাচীন ঠাকুরবাড়িতে পাঁচদিন ধরে চলে ঝুলনযাত্রা উৎসব। সন্ধ্যায় দোতলার মূল মন্দির থেকে রাধাকৃষ্ণকে সিংহাসনে বসিয়ে ভক্তদের কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় বাড়ির দালানে। সেখানে পাঁচদিন ধরে ভক্তরা দর্শন পান গোপীনাথের। হয় সন্ধ্যারতি। রাতে মন্দিরে ফিরে যান রাধাকৃষ্ণ। জন্মষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় হয় বিশেষ পুজো। তারপর হয় নন্দ উৎসব এবং ঘটি প্রতিযোগিতা। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও খেলা ঘিরে ছিল তুমুল উন্মাদনা।