• শিলিগুড়ি শহরে বাঁদর তাড়াবে বন দপ্তর
    এই সময় | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: বাঁদরামি আর কাকে বলে! সাত সকালে গাছ থেকে লাফ মেরে বাড়ির ছাদে উঠে সোজা জলের ট্যাঙ্ক। তেষ্টা মেটাতে ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে জলপান। এরপরে লাফ মেরে পাশের বাড়িতে। রোদে দেওয়া ছিল আচার। সে সব নিমেষে সাবাড়। এখানেই অভিযান শেষ নয়। পেট ভরেনি যে! কাছেরই চারতলা একটি বাড়ির তিনতলার ব্যালকনিতে ডাল শুকোতে দেওয়া ছিল। সেই ডাল প্রবেশ করল বাঁদরের দলের উদরে।

    শিলিগুড়ি শহরে এমনই বেড়েছে বাঁদরের উৎপাত। বাধা দেওয়ার উপায় নেই। বাধা দিতে গেলে দল বেঁধে পাল্টা আক্রমণ করছে বাঁদরের দল। এই অত্যাচারে নাকাল দশা বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। শক্তিগড়, মিলনপল্লি, পাতি কলোনি, ভানুনগর, - হাকিমপাড়া- তালিকায় রয়েছে অনেক উপদ্রুত এলাকা। বাধা দিতে গিয়ে মাসখানেক আগে প্রাণ হারাতে হয় পাতি কলোনির এক পুরকর্মী গোপাল মাহাতোকে। রেলিংহীন ছাদে বাঁদরের পাল দেখে তিনি তাড়াতে গিয়েছিলেন। পাল্টা তেড়ে এলে টাল সামলাতে না-পেরে নীচে পড়ে গিয়ে গুরুতর চোট পান তিনি। এর জেরেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় পুরকর্মীর।

    এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার 'টক টু মেয়র' অনুষ্ঠানে উঠে আসে বাঁদরের উৎপাতের প্রসঙ্গ। লোয়ার ভানুনগর থেকে ফোন করেন এক পুরবাসী। বাঁদরের মোকাবিলা সম্পর্কে তাঁর অভিযোগ, ফোন করলে বনকর্মীরা ছুটে আসেন বটে, তবে কয়েকটি বাজি-পটকা ফাটিয়েই চলে যান। এই সমস্যার স্থায়ী সুরাহা প্রয়োজন। মেয়র ফোনে আশ্বাস দেন, পুরসভা বিষয়টা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। পরে তিনি বলেন, 'দোষ তো আসলে আমাদেরই। বাঁদরকে চিপস, কলা, পাউরুটি খাইয়ে আমরাই অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছি। এখন জঙ্গলের খাবার ছেড়ে বাঁদরের পাল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করব। তাতে কী সুরাহা হবে আমারও জানা নেই।'

    শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া দু'টি বনাঞ্চল রয়েছে। মহানন্দা এবং বৈকুণ্ঠপুর। দু'টি জঙ্গলই বাঁদরে ভরপুর। কিন্তু তার পরেও শহরের বাসিন্দাদের বাঁদরের উৎপাত নিয়ে কখনও মাথা ঘামাতে হয়নি। মাথা ঘামাতে হল লকডাউনের সময়ে। হঠাৎই লকডাউনের সময়ে শহরে হাজির পালে পালে বাঁদর। তখনই বন দপ্তরের আধিকারিকেরা জানান, বনাঞ্চলের পাশ দিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময়ে বাঁদরকে চিপস, কলা, পাউরুটি খাওয়ানোর মাসুল দিতে হবে। এখন শহুরে খাবারের লোভে শিলিগুড়ি শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বাঁদরের পাল। একটা-দু'টো বাঁদর এলে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু পালে পালে বাঁদর এলে নাকাল হচ্ছেন বাসিন্দারা। এক বনাধিকারিক বলেন, 'মেয়র ডাকলে বৈঠকে তো যেতেই হবে। তবে বাঁদর তো আর মেরে ফেলতে পারব না। জঙ্গলে ফেরানোও সহজ কথা নয়। বরং খাবার দেওয়া বন্ধ হলেই বাঁদর ফের জঙ্গলে ফিরতে পারে।'

  • Link to this news (এই সময়)