৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার সাঁতারু বুলা চৌধুরীর পদ্মশ্রী স্মারক, একাধিক পদক, গ্রেপ্তার চোর, রাজ্য পুলিশের বিরাট সাফল্য ...
আজকাল | ১৭ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য পুলিশের বিরাট সাফল্য। উদ্ধার হল প্রাক্তন সাঁতারু বুলা চৌধুরীর চুরি যাওয়া ‘পদ্মশ্রী’ স্মারক। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই একজনকে আটক করেছে। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই ওই যুবক স্মারক চুরির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। তারপরেই চুরি যাওয়া 'পদ্মশ্রী' স্মারক হদিশ পাওয়া যায়। উদ্ধার করা হয়েছে আরও একাধিক স্মারক ও মেডেল।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিসিপি শ্রীরামপুর অর্নব বিশ্বাস। তিনি জানান, 'গত ১৫ আগস্ট সকালে বুলা চৌধুরীর দেবাইপুকুরের বাড়ি থেকে চুরি হয়। সব মেডেল চুরি হয়। আমরা কেস রুজু করি। সবাই উদ্বেগে ছিলাম। একটা বিশেষ দল গঠন হয়। সিআইডির সাহায্য নেওয়া হয়। ২৯৫ মেডেল উদ্ধার হয়। কৃষ্ণা চৌধুরীকে ধরা হয়েছে। বুলা চৌধুরী উদ্বেগে ছিলেন। তবে আমরা কথা দিয়েছিলাম। রিষড়ার বাসিন্দা চোর। কাঁসার জিনিস উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সোর্স কাজে লাগিয়ে পুলিশ কৃষ্ণার খোঁজ পায়। তারপর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে।'
অন্যদিকে বুলা চৌধুরী ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশকে। তাঁর কথায়, পদ্মশ্রী পদকে, যেটা রাষ্ট্রপতি পরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই বড় মেডেলটা কসবার বাড়িতে আছে।ছোট মেডেল যেটা পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে পারেন সেই মেডেলটি পাওয়া যাচ্ছে না। আরও অনেক মেডেল পাওয়া যায়নি। তবে তিনি এখন আশাবাদী, পুলিশও খুঁজে দেখবে।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন সাঁতারু বুলা চৌধুরীর হিন্দমোটরের বাড়িতে চুরির ঘটনায় তদন্তে নামে সিআইডি। গতকাল, শনিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছন সিআইডি আধিকারিকরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে পর্যবেক্ষণ করেন। সঙ্গে ছিলেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরাও। উল্লেখ্য, এফআইআর করার পর থেকেই তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
হিন্দমোটরের দেবাইপুকুর রোডে আদি বাড়ি রয়েছে বুলা চৌধুরীর। বৃহস্পতিবার, স্বাধীনতা দিবসের দিন সেই বাড়িতেই চুরির খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তরপাড়া থানায় চুরির মামলা রুজু হয়েছে। জানা গিয়েছে, আদি বাড়িতে থাকতেন না বুলা চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। অধিকাংশ সময়েই সেটি ফাঁকা থাকত। মালিক না থাকার সুযোগ নিয়েই চোর হানা দিয়েছে বলে অনুমান। ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেছিল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ।
বুলা চৌধুরীর এই পৈতৃক বাড়ি মূলত দেখাশোনা করেন তাঁর ভাই। পুজোর আগে বাড়ি পরিস্কার করানোর নির্দেশ ছিল তাঁর উপর। কিন্তু বাড়ি পরিস্কারের জন্য গেট খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখেন এই কাণ্ড। পিছনের গেট ভাঙা ছিল। জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে খোয়া গিয়েছে, সাঁতারুর জেতা সমস্ত পদক, স্মারক। বাথরুমের কল, ঠাকুরঘরের আসবাবও নিয়ে পালিয়েছে চোর। তবে চোর নিতে পারেনি তাঁর পদ্মশ্রী পুরস্কার কারণ সেটি রয়েছে কলকাতার ফ্ল্যাটে। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে হিন্দমোটরের দিকে রওনা দেন বুলা চৌধুরী। সারাজীবনে পাওয়া সমস্ত মেডেল চোর নিয়ে গিয়েছে শুনে ভারাক্রান্ত সাঁতারু।
জানা গিয়েছে, এর আগে ৫–৬ বছর পূর্বে বুলা চৌধুরীর এই পৈতৃক বাড়িতে চুরি হয়েছিল একাধিক মূল্যবান জিনিসপত্র। তিন বার নাকি এই বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই বাড়িতেই শুরু বুলা চৌধুরীর সাঁতারের কেরিয়ার। দেবাইপুকুরে প্রথম তাঁর সাঁতারে হাতেখড়ি। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের বাড়িতে চুরির খবর রটে যেতেই তীব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেবাইপুকুর এলাকায়। বর্তমানে বুলা চৌধুরী সপরিবারে থাকেন কলকাতার কসবার ফ্ল্যাটে। উত্তরপাড়ার এই বাড়িতে তিনি মাঝেমধ্যে যান। কয়েক মাস আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে বাড়ি বন্ধই ছিল। যদিও পদ্মশ্রী পদক চুরি যায়নি বলেই খবর। সেটি তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে থাকে। তবে অভিযোগ, চোরেরা নাকি পদ্মশ্রী পুরস্কারের মেমেন্টোও নিয়ে গিয়েছে। গোটা ঘর লণ্ডভণ্ড করে রেখে গেছে চোরেরা। উত্তরপাড়ায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। জানা গেছে বুলা চৌধুরীর এই বাড়িতে আগেও একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। বারবার একই ঘটনা ঘটায় চিন্তিত পুলিশ প্রশাসন। পদ্মশ্রী ছাড়াও খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কারও পেয়েছেন তাঁর কৃতিত্বের জন্য। ১৯৯১ সালে তিনি সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমসে ৬টি সোনা জেতেন।