• জয়েন্ট বিডিওদের বদলিতে স্বচ্ছতা আনতে নতুন নীতি চালু করল রাজ্য সরকার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • রাজ্যের গ্রামীণ প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে জয়েন্ট বিডিওদের বদলির ক্ষেত্রে নতুন নীতিতে সিলমোহর দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। সম্প্রতি এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নীতি কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বহুদিন ধরেই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে বদলির নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় নানা অভিযোগ উঠে আসছিল। এবার নির্দিষ্ট কাঠামো ও নিয়মনীতি মেনে বদলির প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে।

    পঞ্চায়েত দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, জয়েন্ট বিডিওদের বদলি এখন থেকে প্রতি তিন বছর অন্তর হবে। বদলির জন্য সমগ্র রাজ্যকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে – ‘এ’ থেকে ‘এফ’ পর্যন্ত। দক্ষিণবঙ্গকে চারটি এবং উত্তরবঙ্গকে দুইটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। একজন জয়েন্ট বিডিও একই জোন বা জেলায় পরপর দু’বার বদলি হতে পারবেন না। বদলির নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে, চাকরি জীবনে একজন অফিসার বাড়ির কাছাকাছি একটি জোনে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

    নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কোনও আধিকারিকের নিজের জেলায় সাধারণত পোস্টিং দেওয়া হবে না। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন রাজ্য পর্যায়ের বিশেষ কমিটির সুপারিশ থাকলে, নিজের জেলায় কাজের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এই নীতিতে আরও উল্লেখযোগ্য সংযোজন হল, অবসর গ্রহণের এক বছর আগে কোনও জয়েন্ট বিডিওকে বদলি করা হবে না। পাশাপাশি, বদলির বিকল্প হিসেবে জয়েন্ট বিডিওরা স্বেচ্ছায় অন্য দপ্তরে তিন বছরের জন্য ডেপুটেশনে যেতে পারবেন।

    অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বদলির ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অন্তত আট বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জয়েন্ট বিডিওদের জন্য রাজ্য সদর দপ্তর, জেলা সদর দপ্তর বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করার সুযোগ থাকবে। চাকরি জীবনের অন্তত দুই থেকে তিন বছর তাঁরা এই ধরনের দায়িত্বপূর্ণ পোস্টে থাকবেন, যা তাঁদের প্রশাসনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশেষ পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জরুরি পরিস্থিতিতে বদলির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। রাজ্য পর্যায়ের একটি কমিটি এই ধরনের আবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।

    এই নতুন বদলি নীতি নিয়ে প্রশাসনের একাংশের মত, এটি চালু হলে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ প্রশমিত হবে এবং বদলি প্রক্রিয়া ঘিরে যে অনিয়ম চলত, তাতে লাগাম টানা যাবে। তৃণমূল কর্মচারী সংগঠনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী এই নীতি কার্যকরের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়েছেন। তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রশংসনীয় পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘জয়েন্ট বিডিওদের বদলিকে ঘিরে এতদিন নানা অনিয়ম চলত। এই নতুন নীতি সেই অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে আমরা আশাবাদী। সরকারের উচিত ধাপে ধাপে সব ক্যাডারের ক্ষেত্রেই এই ধরনের বদলি নীতি চালু করা।’

    ওয়াকিবহল মহলের মতে, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে প্রশাসনিক কাজে গতি আসবে, কর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের অনুভূতি তৈরি হবে। এর পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলিও অধিক কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)