গোপাল পাঁঠার পরিচয় ‘বিকৃত’, পরিচালক বিবেকের বিরুদ্ধে FIR ক্ষুব্ধ পরিবারের
প্রতিদিন | ১৭ আগস্ট ২০২৫
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: মুক্তির অপেক্ষায় থাকা একটি হিন্দি ছবিতে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ। বিখ্যাত বাঙালি চরিত্র গোপাল মুখোপাধ্যায়ের পরিচয় বিকৃত করে দেখানোর দায়ে এফআইআর দায়ের হয়েছে ওই ছবির পরিচালকের বিরুদ্ধে। বউবাজার থানায় ওই এফআইআর করেছেন ছবিতে দেখানো ‘গ্রেটার ক্যালকাটা কিলিং’-এর বিশেষ চরিত্র গোপাল মুখোপাধ্যায়ের নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায়।
গোপাল মুখোপাধ্যায়, যিনি মুখে মুখে পরিচিত ‘গোপাল পাঁঠা’ নামে। তাঁর নাতির অভিযোগ, “দাদুর চরিত্র সিনেমায় রাখা হবে বলে আমাদের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। উল্টে ট্রেলারে বা সিনেমার গল্পে তাঁকে ‘এক থা কষাই গোপাল পাঁঠা’ বলে পরিচয় করানো হচ্ছে।” এই ‘ধৃষ্টতা’র জন্য পরিচালককে ক্ষমা চাইতে বলে আইনি নোটিসও পাঠিয়েছেন শান্তনু। ‘ছেচল্লিশের দাঙ্গা’ বলে কুখ্যাত যে ‘গ্রেটার ক্যালকাটা কিলিং’, সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে শান্তনুর বক্তব্য, “অনুশীলন সমিতির কাজে যুক্ত থাকার পাশাপাশি দাদু দুটো পাঁঠার মাংসের দোকান চালাতেন। কুস্তিগির ছিলেন, বুকের পাটা ছিল ঈর্ষণীয়। হিন্দিভাষীদের মুখে মুখে সেই বুকের পাটা হয় ‘পাট্টা’। শেষে তাঁর পেশা আর নেশা মিলিয়ে অপভ্রংশে নাম হয়ে যায় গোপাল পাঁঠা। কিন্তু দাদু আমার কষাই চরিত্র ছিলেন না, ভিলেনও ছিলেন না। ছিলেন সিংহহৃদয়। ১৯৪৬-এ মুসলিম লিগের দাঙ্গা প্রতিরোধে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আতঙ্কিত মানুষের স্বার্থে যিনি অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। বাঁচিয়েছিলেন এই বাংলা ও বাঙালিকে। তাঁর চরিত্রকে বিকৃত করে দেখিয়েছেন বিবেক।”
এবারের ১৬ আগস্ট ৮০ বছর পূর্ণ করল মূল সেই ঘটনার প্রেক্ষিত। বউবাজার ওয়েলিংটন স্কোয়ারের কাছে মলঙ্গা লেনের বুকে ঘটে গিয়েছিল সেই ঘটনা। স্বাধীনতার আন্দোলনে বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া শেষ সংগ্রামে যে গোপাল অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন দেশের মানচিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখতে। শান্তনু বলছেন, ছেচল্লিশের সেই দাঙ্গার আগে কলকাতার নানা জায়গায় লিগ ভলান্টিয়াররা জড়ো হচ্ছিলেন। ১৬ আগস্ট শহিদ মিনারে তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি ও মুসলিম লিগের নেতৃত্বে জনসভা হয়। সুরাবর্দি খাঁ সাহেবের সঙ্গে শোনা যায় সেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও ছিলেন। দাবি ওঠে আগে লিগকে তাদের পাকিস্তান বুঝিয়ে দিতে হবে, তার পর ভারতবর্ষ স্বাধীন হবে। কিন্তু লিগ ভলান্টিয়ারদের সশস্ত্র অবস্থায় দেখে জ্যোতিবাবু সভা ছেড়ে চলে যান। সভা শেষে ধর্মতলা চত্বরে যত অস্ত্রের দোকান ছিল সব লুঠপাট শুরু হয়। চলে খুন-রাহাজানি।
দাঙ্গাকারীদের ‘অ্যাকশন’ ছড়িয়ে পড়ে নারকেলডাঙা, কলুটোলায়। যে দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে নিজের অনুগামীদের সংঘবদ্ধ করে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন গোপাল। অগ্নিমন্ত্র দিয়ে বলেছিলেন, ‘লিগ দাঙ্গাকারীরা একজনকে মারলে, ১০ জনকে মারবে। কিন্তু নিরীহ কোনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা মহিলা মুসলিমদের কেশ ছোঁয়া যাবে না।’ সেই ঘটনা নিয়ে গোপালবাবুর পরিচয় বিকৃত করার অভিযোগ তুলেই সরব পরিবার।