৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাঁতারু বুলার ২৯৫টি পদক উদ্ধার করল পুলিশ, পাকড়াও চোর, তবে পদ্মশ্রী স্মারকের খোঁজ মেলেনি
আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
প্রাক্তন সাঁতারু বুলা চৌধুরীর চুরি যাওয়া স্মারক এবং পদক উদ্ধার করল পুলিশ। অভিযোগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ধরা হয়েছে চোরকে। রবিবার শ্রীরামপুর ডিসিপি অফিসে এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করল পুলিশ। জানানো হয়েছে, চুরি যাওয়া সমস্ত পদকই উদ্ধার করা গিয়েছে। সেগুলো প্রাক্তন সাঁতারুর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রাক্তন সাঁতারু। তবে চুরি যাওয়া পদ্মশ্রী পদক এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার হুগলির হিন্দমোটর দেবাইপুকুরে প্রাক্তন সাঁতারু তথা পদ্মশ্রী প্রাপক বুলার বাড়িতে চুরির ঘটনা সামনে আসে। তাঁর দাবি, পেশাজীবনের প্রাপ্ত যাবতীয় পদক রাখা ছিল ঘরের একটি আলমারিতে। সেখান থেকে সব কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে।
বুলা হিন্দমোটরের বাড়িতে নিয়মিত থাকেন না। কলকাতায় বসে চুরির খবর পান। ফাঁকা বাড়ি থেকে পদ্মশ্রী স্মারক-সহ সমস্ত পদক চুরি হয়ে গিয়েছে শুনে কেঁদে ফেলেন তিনি। অন্য দিকে, চুরির ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি। আগেই পুলিশ বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছিল। তাঁদের মধ্যে এক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরির তথ্য মেলে পুলিশ সূত্রে খবর। রবিবার সকালে ‘চোর’কে নিয়ে উত্তরপাড়া থানা থেকে শ্রীরামপুর ডিসিপি অফিসে নিয়ে যায় পুলিশ।
খবর দেওয়া হয় বুলাকে। তিনি পদক উদ্ধারের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পরিবারও। সাংবাদিক বৈঠকে ডিসিপি (শ্রীরামপুর) অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত ১৫ অগস্ট সকালে বুলা চৌধুরীর দেবাইপুকুরের বাড়িতে চুরি হয়। সব মেডেল চুরি হয়ে যায়। আমরা কেস রুজু করি। সকলেই উদ্বেগে ছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একটা বিশেষ দল গঠন করা হয়েছিল। সিআইডির সাহায্য নিয়েছিলাম। ২৯৫টি মেডেল উদ্ধার হয়েছে।’’
ডিসিপি জানান, চুরির ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন ছিলেন প্রাক্তন সাঁতারু বুলা। তবে তাঁরা কথা দিয়েছিলেন শীঘ্রই চোরকে ধরবেন। উদ্ধার করা হবে সমস্ত পদক। তিনি বলেন, ‘‘চোর রিষড়ার বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ‘সোর্স’ কাজে লাগিয়ে পুলিশ অভিযুক্তের খোঁজ পায়। তারপর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে।’’
পুুলিশের সাংবাদিকের বৈঠকের পরে বুলা বলেন, ‘‘আগেও দু’বার চুরি হয়েছিল বাড়িতে। ২০১৪ সালে কিছুই উদ্ধার হয়নি। সে বার সোনাদান চুরি হয়েছিল। কিন্তু এ বার পদক চুরি গিয়েছিল। এটা আমার আবেগের জায়গা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলাম, ‘দিদি আমার পদকগুলো উদ্ধার করে দিন। আপনি মন্ত্রী থাকার সময় ছ’টা মেডেল জিতে সকলকে গর্বিত করেছিলাম।’’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথমে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ‘ইন বর্ন’ খেলোয়াড়। যে যেটা করেন, তা স্বীকার না করলে, প্রকৃত খেলোয়াড় হওয়া যায় না। আমি দিদির পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি উত্তরপাড়ার আইসি-কে ধন্যবাদ যাব। আমি কেঁদে ফেলায় উনি বলেছিলেন, ‘আমি আপনার মুখে হাসি ফিরিয়ে দেব।’ ওঁকে অনেক ধন্যবাদ। ডিসিপি অর্ণববাবুকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে উদ্ধার হওয়া পদক স্মারকের মধ্যে আমি পদ্মশ্রী দেখতে পাচ্ছি না।’’
চুরি বুলা চৌধুরীর হিন্দমোটরের বাড়িতে, খোয়া গিয়েছে প্রাক্তন সাঁতারুর পদ্মশ্রী স্মারক, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, লক্ষ্মীর ঘটও
বুলার সংযোজন, ‘‘পদ্মশ্রী যখন দেওয়া হয়, তখন দুটো দেওয়া হয়। যেটা রাষ্ট্রপতি পরিয়ে দেন, সেটা বড় পদক। আর একটা পদক দেওয়া হয়। সেটা সরকারি জায়গায় পরে যাওয়া যায়। ওইটি আমার বাড়িতে ছিল। আমি দেখতে পাইনি সেটা। বাড়িতেও খুঁজব সেটা। আশা করছি, পুলিশ খুঁজে দেবে। এখনও ওঁরা তদন্ত করছেন।’’