• মেট্রো রেলের উদ্বোধনে মোদীর অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ রেলমন্ত্রী বৈষ্ণবের, যাবেন কি মমতা ?
    আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • চলতি মাসের ২২ অগস্ট থেকেই একযোগে চালু হচ্ছে তিনটি নতুন মেট্রো রুট। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তবে নিমন্ত্রণপত্রেই রয়েছে চমক। শুধু অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ নয়, সেইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিভিন্ন রেল প্রকল্পের বিস্তারিত তালিকা ও কেন্দ্র কত টাকা বরাদ্দ করেছে তার পূর্ণাঙ্গ হিসেবও পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠি নবান্নে পৌঁচেছে গত বৃহস্পতিবার। যদিও নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুধুমাত্র রেলমন্ত্রীর চিঠিই নয়, রেলমন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা নবান্নের আধিকারিকদের ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমন্ত্রণ বার্তা পাঠানোর বিষয়ে নিয়মকানুন জানতে চেয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, সোমবার থেকে শুরু হতে চলা সপ্তাহেই মেট্রো রেলের অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যাবে।

    তবে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক ইস্যুতে সংঘাতের পরিবেশ রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ রেখেছে বলেই অভিযোগ রাজ্যের। একই ভাবে আবাস যোজনা, পানীয় জল প্রকল্পের টাকাও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ মমতার সরকারের। তা ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সর্বদা খড়্গহস্ত থাকেন মমতা। পাশাপাশি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকার-সহ বাংলার বিজেপির নেতারাও তৃণমূলের সঙ্গে জাতীয় স্তরের নেতারা একমঞ্চে হাজির হওয়া নিয়েও আপত্তি রয়েছে। সেই আবহেই মোদী-মমতাকে আগামী শুক্রবার এক মঞ্চে দেখা যেতে পারে। তবে যেহেতু খোদ প্রধানমন্ত্রী মেট্রো রেলের প্রকল্প উদ্বোধনে আসছেন, তাই এক্ষেত্রে রাজ্য বিজেপির নেতারা কিছুটা হলেও সংযম দেখাচ্ছেন বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

    রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে—মুখ্যমন্ত্রী কি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন? অতীতে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধনে রাজনৈতিক টানাপড়েন চোখে পড়েছে। ফলে এ বার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায় কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল চরমে। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ হাজির হবেন কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট বার্তা দেয়নি নবান্ন। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রেলমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র আসার কথা মমতা জেনেছেন। তবে কোনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাননি আধিকারিকদের। বরং যেভাবে আমন্ত্রণপত্রে মেট্রো প্রকল্পের আর্থিক খরচের খতিয়ানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে নেবেন, তা নিয়েও চিন্তায় নবান্নের আধিকারিকরা। তবে যেহেতু ২০০৯-১১ সাল পর্যন্ত তিনি রেলমন্ত্রী থাকার সময়তেই এই মেট্রো প্রকল্পগুলির সূচনা হয়েছিল, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী রেলের অনুষ্ঠানে হাজির হতেই পারেন বলে মনে করছে কলকাতা মেট্রো রেলের আধিকারিকরা।

    আগামী শুক্রবার থেকে চালু হবে গ্রিন লাইন, অরেঞ্জ লাইন ও ইয়েলো লাইন। এর ফলে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পথ সরাসরি জুড়ে যাবে এবং আরও সুগম হবে দৈনন্দিন যাতায়াত। নতুন পরিষেবার মধ্যে রয়েছে—রুবি মোড় থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত মেট্রোপথ, যা ইএম বাইপাস অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক হবে। পাশাপাশি উদ্বোধন হচ্ছে নোয়াপাড়া থেকে সরাসরি কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা। এই রুট চালু হলে শহর থেকে এয়ারপোর্ট যাত্রা অনেকটাই দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত হবে। একই দিনে শুরু হবে শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ পরিষেবা। অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম ও বিমানপথ—তিন দিকেই একইসঙ্গে মেট্রোর জাল ছড়িয়ে পড়তে চলেছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)