যশোহর রোড থেকে বিমানবন্দর মেট্রোয় সফর করবেন মোদী, জানালেন শমীক, রাজ্যকে তোপ ৪৩টি প্রকল্প আটকে থাকা নিয়ে
আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
দেড় বছর পর ফের কলকাতায় মেট্রো সফর করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২২ অগস্ট কলকাতায় এসে তিনটি নতুন মেট্রোপথের উদ্বোধন করবেন তিনি। নতুন চালু হওয়া একটি মেট্রোপথে নিজে সফরও করবেন। রবিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। মেট্রো সফর সেরে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে পৌঁছবেন দমদমের সভাস্থলে। আলিপুরদুয়ার এবং দুর্গাপুরের মতোই দমদমেও প্রথমে প্রশাসনিক সভা এবং তার পরে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে চলেছেন মোদী। যে মেট্রোপথগুলির উদ্বোধন শুক্রবার মোদীর হাতে হবে, সেগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই পরিকল্পিত হয়েছিল।
মোদীর এই সফরে কলকাতা মেট্রোর ইয়েলো লাইনে অর্থাৎ নোয়াপাড়া-বারাসত রুটে যাত্রী পরিষেবার সূচনা হতে চলেছে। তবে প্রস্তাবিত রুট বারাসত পর্যন্ত হলেও, আপাতত নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর অর্থাৎ ‘জয়হিন্দ’ স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু হচ্ছে। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই পথে কাজ এগিয়েছে মাইকেলনগর পর্যন্ত। তবে এখনই সে পর্যন্ত ট্রেন চালানোর বন্দোবস্ত হয়নি। তাই নোয়াপাড়া, যশোহর রোড এবং জয়হিন্দ, এই তিনটি স্টেশনের মধ্যে আপাতত যাত্রী পরিষেবা চালু করা হবে।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি রবিবার জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথমে যশোহর রোড মেট্রো স্টেশনে পৌঁছবেন। সেই স্টেশনে দাঁড়িয়েই তিনি মেট্রো পরিষেবার উদ্বোধন করবেন। প্রথম ট্রেনটিতে চেপে তিনি নিজেই যশোহর রোড স্টেশন থেকে জয়হিন্দ (বিমানবন্দর) স্টেশন পর্যন্ত যাবেন। তার পরে জয়হিন্দ থেকে আবার মেট্রো চেপেই যশোহর রোড স্টেশনে ফিরবেন। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছবেন দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে। ওই মাঠেই হবে মোদীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সভা।
অরেঞ্জ লাইন (নিউগড়িয়া থেকে বিমানবন্দর) এবং গ্রিন লাইনে (সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান) সম্প্রসারিত পরিষেবার উদ্বোধনও ২২ অগস্টই করতে চলেছেন মোদী। অরেঞ্জ লাইনে নিউগড়িয়া থেকে রুবি (হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন) পর্যন্ত পরিষেবার উদ্বোধন তিনি আগেই করেছিলেন। এ বার রুবি থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবার সূচনা করবেন। ফলে নিউগড়িয়া থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত ইএম বাইপাসের পুরো বিস্তার জুড়েই মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে।
গ্রিন লাইন বা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড অংশের পরিষেবার সূচনাও ২২ অগস্টই করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পথে এক প্রান্তে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত অন্য প্রান্তে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো আগেই চালু হয়েছে। মাঝে শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেডের মধ্যে শুধু পরিষেবা চালু হওয়া বাকি ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী আসন্ন বঙ্গ সফরে সেই অংশকেও আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষেবার মানচিত্রে আনবেন। ফলে সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ বিস্তার জুড়েই এ বার থেকে মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে যাবে। দেড় বছর আগে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেডের মাঝে মেট্রো চলাচলের সূচনা করে গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় বছর পরে ফের যখন তিনি কলকাতায় মেট্রো সফর করতে আসছেন, তখন সম্পূর্ণ নতুন একটি পথে পরিষেবা চালু করে দিয়ে যাচ্ছেন।
রবিবার বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যে ৪৩টি রেল প্রকল্প আটকে থাকার কথা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণও করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘একটা রাজ্যের যদি কোনও নির্দিষ্ট জমি নীতি না থাকে, একটি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই যদি ঘোষণা করে যে আমরা এক বর্গফুট জমিও নতুন করে অধিগ্রহণ করব না, তা হলে পরিণতি কী হতে পারে তা আমরা রেলের প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করতে গিয়েই বুঝতে পারছি।’’ শমীক বলেন, ‘‘সেক্টর ফাইভের সঙ্গে কলকাতার সংযোগ শুধু চিংড়িঘাটার জন্য বন্ধ হয়ে রয়েছে। আমার সঙ্গে ওখানকার স্থানীয় বিধায়ক এবং মন্ত্রী সুজিত বসুর কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, রাস্তার এ পার পর্যন্ত যা হয়েছে, সেটা তাঁর দায়িত্ব। ওখানে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি অংশের ক্ষেত্রে দমকলমন্ত্রী তাঁর অপাগরতার কথাও জানিয়েছেন।’’ কলকাতা পুলিশ এবং ট্র্যাফিক পুলিশের অসহযোগিতার কারণে তিনটি পিলার নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে শমীক দাবি করেছেন।