• হিন্দোলের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন নানা মহলে
    আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিবিরের সঙ্গে পুরনো রাজনৈতিক সংঘাতের জেরেই সুদূর স্পেনে গবেষণারত প্রাক্তনী হিন্দোল মজুমদারকে অহেতুক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। বেছে বেছে ছাত্র, গবেষকদের ধরা হলেও খোদ শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় মন্ত্রী বা তাঁর চালকের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হল তা নিয়েও যাদবপুরের ছাত্র, শিক্ষক মহল প্রশ্ন তুলছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার আলিপুর কোর্টে হিন্দোলকে হাজির করা হলে সরকারি কৌঁসুলি জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে হিন্দোলের সঙ্গে আমেরিকান সেন্টারে হামলা এবং খাদিম-কর্তা অপহরণে দোষী জঙ্গি আফতাব আনসারির তুলনা করেছিলেন।

    পুলিশ অবশ্য হিন্দোলকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবেই দাবি করছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত গবেষকের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে তা পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। মূলত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি ঘিরে হামলা করার আগে এবং পরে কোনও নির্দেশ এসেছিল কি না এবং ওই গবেষকের সঙ্গে কাদের কথা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। হিন্দোল ওই সময়ের কোনও চ্যাট ডিলিট করেছেন কি না, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে চাইছে। হিন্দোল তদন্তে সহযোগিতা করছেন বলেও তদন্তকারীদের দাবি।

    তবে হিন্দোলের সঙ্গে আফতাব আনসারির তুলনা করায় রাজ্য জুড়ে সমাজকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আগামিকাল, সোমবার যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। যাদবপুরের ছাত্র, শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, হিন্দোল যাদবপুরে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠিত করতে চেয়ে তৃণমূল শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’-র বিরাগভাজন হয়েছেন। তাই সুযোগ বুঝে তাঁকে ভাঙচুর, গোলমালে জড়ানো হয়েছে। এর আগে আরও তিন জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাঁরা প্রমাণাভাবে জামিন পান। শনিবার হিন্দোলের বাবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চন্দন মজুমদার বলেন, ‘‘শুধু ছেলের জামিনের দাবি মেলে ধরা নয়, হিন্দোলের পড়াশোনা, গবেষণায় যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আইনি লড়াই চলবে।’’

    হিন্দোলের গ্রেফতারি নিয়ে বিরোধীরা একযোগে শাসক দলকে নিশানাও করেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “আমরা হিন্দোলদের রাজনীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু এখানে সরকারি দলের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদী হলে তাঁর হাল খুব খারাপ হবে। শিলাদিত্য চৌধুরী, অম্বিকেশ মহাপাত্রদের কথা মনে নেই? মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় এসএসকেএমের ডাক্তারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হিন্দোল কেন, যে কারও এই অবস্থা করবে এই সরকার।” সরব হয়েছে সিপিএমও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রী তাঁর গাড়ির চাকায় ছাত্রকে চাপা দিলেন। তিনি সাধু! অথচ কৃতী গবেষককে দেশে ফেরা মাত্র পুলিশ অপরাধীর মতো ধরে আনল। তার পরে সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে তুলনা! এই সরকার অপরাধ-মনস্ক। হিম্মত থাকলে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এর সিকি ভাগও করে দেখাক!” কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, “হিন্দোলের গ্রেফতারি ঘৃণ্য, লজ্জাজনক। ওঁকে এখনও পাকিস্তানি বলেনি, এই অনেক।” তাঁর আরও সংযোজন, “বাংলাভাষীদের জন্য লড়াইয়ের কথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভণ্ডামি করছেন। কারণ তাঁর রাজত্বেই এক জন বাঙালি গবেষককে নির্যাতন করা হচ্ছে।”

    তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য ‘আফতাব’ থেকেও এক ধাপ এগিয়ে হিন্দোলের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনের তুলনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার দিন লাদেনও ঘটনাস্থলে ছিল না। তার মানে সে ষড়যন্ত্রকারী নয়? কৃতী ছাত্র অপরাধ করলেও তাকে ছাড় দিতে হবে? লাদেনও মেধাবী ছিল। পড়াশোনায় ভাল করেছি বলে অন্যায়, অপরাধ করলে কিছু বলা যাবে না, এটা মামাবাড়ির আবদার!”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)