• 'অচেনা' ইস্টবেঙ্গলের হিরো দিয়ামানতাকোস, মোহনবাগানকে হারিয়ে ডুরান্ডের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল
    আজকাল | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • ইস্টবেঙ্গল-২ মোহনবাগান-১
    (দিমি- পেনাল্টি-সহ ২) (থাপা)

    কৌশিক রায়: এই ইস্টবেঙ্গল অচেনা। এই ইস্টবেঙ্গল জেদের প্রতীক। এই ইস্টবেঙ্গলের জেতার খিদে রয়েছে।

    দিমিত্রি দিয়ামানতাকোসের জোড়া গোলে ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হোসে মোলিনার মোহনবাগানকে হারাল অস্কার ব্রুজোঁর ইস্টবেঙ্গল। ৯০ মিনিট জুড়ে যুবভারতী দাপাল লাল-হলুদই। ফিটনেস, মাঝমাঠ, আক্রমণ, রক্ষণ সবেতে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের আগেরদিন অস্কার বলেছিলেন, তাঁর দল যে কতটা উন্নতি করেছে সেটা দেখানোর সময় এসে গিয়েছে। আর তার পরের দিনই ৬০,০০০ দর্শকের সামনে সেটা দেখিয়ে দিলেন তিনি।

    রবিবার সল্টলেকে মোহনবাগানকে ২-১ হারাল ইস্টবেঙ্গল। এদিন প্রথমার্ধের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের ঝড়। বল পজেশনও ছিল লাল-হলুদেরই বেশি। সবথেকে বেশি আক্রমণ উঠছিল বিপিন সিংয়ের দিক থেকেই। আশিস রাইকে বারবার কাটিয়ে বল আছড়ে পড়ছিল মোহনবাগানের বক্সে। ম্যাচের দু' মিনিটের মাথাতেই সবুজ-মেরুনের গোলে জোরালো শট রাখেন এডমুন্ড। আটকে দেন বিশাল কাইথ।

    তবে এদিন যে অস্কার পুরো হোমওয়ার্ক করে নেমেছেন, তা বোঝা গেল প্রথম থেকেই। গোলের মধ্যে থাকা লিস্টনকে পুরো বোতলবন্দি করে রাখলেন রাকিপ। তিনি কোনওভাবে বেরিয়ে পড়লেও তাঁকে সহযোগিতা করেছেন সিবিয়ে। ডানদিকে তরুণ পাসাংকে আটকে রেখেছিলেন আনোয়ার। ম্যাচের প্রথম ধাক্কা খায় ইস্টবেঙ্গলই। বাঁ পায়ের কুঁচকিতে টান লেগে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় গোলের মধ্যে থাকা হামিদ আহদাদকে। মাত্র ১৫ মিনিটেই তাঁর জায়গায় মাঠে আসেন দিয়ামানতাকোস।

    ২৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে দিয়ামানতাকোসকে ফাউল করেন আলড্রেড। রেফারি ফাউল দিলেও মিগুয়েলের ফ্রি কিক বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথম গোল আসে সেই দিয়ামানতাকোসের পা থেকেই। ৩৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে আশিস রাই ফেলে দেন বিপিন সিংকে। রেফারি ফাউল দিলে পেনাল্টি থেকে কোনও ভুল করেননি দিমি। বিশাল কাইথ ঠিক দিকে ঝাঁপালেও কাজ হয়নি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আপুইয়া গোলে শট নিলেও বাঁচিয়ে দেন গিল। সেকেন্ড হাফে তরুণ খেলোয়াড় পাসাংয়ের জায়গায় নামেন জেসন কামিংস। মোহনবাগান সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ডানদিক থেকে সাহাল বক্সের মধ্যে গোলে শট রাখেন। ফাঁকায় কামিংস দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাস দিলে নিশ্চিত গোল হতো।

    ঠিক তারপরেই ৫২ মিনিটের মাথায় দিয়ামানতাকোস ২-০ করেন। মিগুয়েলের বাড়ানো বল ধরে মহেশ পাস বাড়ান দিয়ামানতাকোসকে। গোলে শট নেন দিমি। আলবার্তোর পায়ে লেগে মোহনবাগানের জালে বল জড়িয়ে যায়। ৫৮ মিনিটে গোললাইন সেভ করেন কেভিন সিবিয়ে। ৬৮ মিনিটের মাথায় লিস্টনের ফ্রি কিক পোস্টে লাগে। ঠিক তার পরেই লিস্টনেরই কর্নার থেকে ২-১ করেন থাপা। ব্যবধান কমিয়ে মিনিট পনেরো টানা আক্রমণ হানে বাগান।

    গোলের পরেই থাপা, টম এবং সাহালকে তুলে পেত্রাতোস, দীপেন্দু এবং টাংরিকে নামান মলিনা। ৬৮ মিনিট থেকে প্রায় ৮০ মিনিটের কাছাকাছি একটা আক্রমণের ঝড় ছিল ইস্টবেঙ্গলের বক্সে। কিন্তু আনোয়ার, সিবিয়ের অভিজ্ঞতা সামলে দেয় সেই আক্রমণকে। ৮০ মিনিটের মাথায় মহেশ, বিপিন এবং এডমুন্ডের জায়গায় বিষ্ণু, ডেভিড ও সৌভিককে নামান অস্কার। শেষের দিকে সুহেল ভাটকে নামালেও কাজ হয়নি। ম্যাচের শেষে রশিদের জার্সি নিয়ে ডার্বি জয় প্যালেস্তেনিয়ান ফুটবলারকে উৎসর্গ করেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। দু' বছর আগে সুপার কাপের পর এই প্রথম ডার্বি জিতল লাল-হলুদ। কোচ অস্কারের মুখেও ধরা পড়ল চওড়া হাসি। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান গ্যালারি। যাঁরা ছিলেন মাঠে তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন পেত্রাতোস।
  • Link to this news (আজকাল)