নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: নাই বা থাকল রাজ্যপাট। রাজবাড়ির পুজো বলে কথা! আভিজাত্য তো থাকবেই। আর তাই রীতি মেনে জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে জন্মাষ্টমীর পরদিন রবিবার সকালে অনুষ্ঠিত হল দধি কাদো উৎসব বা কাদা খেলা। জন্মাষ্টমীতে গোপালকে যে আস্ত ফল ভোগে নিবেদন করা হয়, সেই ফলই দেওয়া হয় কাদা খেলায়। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে প্রথমে গোপাল কাদা খেলে। তারপর দধি কাদো উৎসবে শামিল হয় এলাকার ছেলেরা। কাদা খেলার মাটি দিয়েই তৈরি হবে রাজবাড়ির প্রতিমা। এদিন দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো হয় রাজবাড়িতে।
সেই অর্থে এদিন থেকেই জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাকে কাঠি পড়ল। একইসঙ্গে এদিন রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত হল ৫১৫ বছরের মনসা পুজো। এখানে মনসার সঙ্গে পুজো পান তাঁর বোন নেতি। থাকে অষ্টনাগের মূর্তি। এই পুজোয় পদ্ম পাতা আবশ্যিক। তবে যে কোনও পদ্ম পাতা নয়, যে পাতার পিছনে নৌকার মতো ছাপ থাকবে, সেটাই লাগবে রাজবাড়ির পুজোয়। মনসার ভোগেও বিশেষত্ব। চিতল, বোয়াল, ইলিশ, চিংড়ি ও কাতলা মাছের রান্না করা পদ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় মনসা দেবীকে। সঙ্গে ছিল পোলাও।
প্রতিবারের মতো এবারও বহু মানুষ শামিল হন রাজবাড়ির মনসা পুজোয়। উপচে পড়ে ভিড়। পুজো উপলক্ষ্যে রাজবাড়ির মাঠে বসেছে বিরাট মেলা। সাতদিন ধরে চলবে ওই মেলা। রাজ পরিবারের কুলপুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, রীতি মেনে রাজ পরিবারের সদস্যরা কুলোয় হাঁসের ডিম, পান-সুপারি দিয়ে মা মনসাকে বরণ করেন। রাজবাড়ির তরফে দেওয়া শাড়িতে সাজানো হয় দেবীকে। শনিবার অধিবাসের পর রবিবার সকালে ফের রাজ পরিবারের সদস্য প্রমথ বসু ও তাঁর পুত্রবধূ লিন্ডা বসু মাকে বরণ করেন। তারপরই শুরু হয় পুজো। পরিবারের সদস্যরাই ভোগ রান্না করেন। বহু মানুষ মনোস্কামনা পূরণে পায়রা ওড়ান। মনসাপুজো উপলক্ষ্যে তিনদিন ধরে বিষহরি পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে রাজবাড়িতে। যতক্ষণ মনসামঙ্গল কাব্যের পালাগান শেষ না হবে, রাজবাড়ির মা মনসা ততক্ষণ বিসর্জন হবে না।
রাজ পরিবারের আরাধ্য দেবতা বৈকুণ্ঠনাথের পুজোর পর এদিন শুরু হয় কাঠামো পুজো। তারপরই হয় কাদোখেলা। যা রাজ পরিবারের নন্দ উৎসব নামে পরিচিত। রাজ পরিবারের সদস্য প্রমথকুমার বসু বলেন, এবার পুজো ৫১৫ বছরে পা রাখছে। দিন বদলেছে। কিন্তু পুজোর রীতি আজও অটুট।