• পলিক্লিনিকে কর্মীর ঝুলন্ত দেহ, মালিকের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শহরের একটি পলিক্লিনিকের ভিতর কর্মরত অবস্থায় সেখানকার এক কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার। রাহুল ঝা (২৮) নামে ওই কর্মীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। এনিয়ে ওই পলিক্লিনিকের মালিক ও তাঁর স্ত্রীর নামে রবিবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার। 

    ঘটনার পর থেকেই পলিক্লিনিকের মালিক অভিযুক্ত চিকিৎসক সপরিবারে এলাকাছাড়া। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির পুলিস সুপার খণ্ডবাহলে উমেশ গণপত। তিনি বলেন, ওই পলিক্লিনিকটি আপাতত সিল করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, পলিক্লিনিকের মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এদিন বিকেলে রাস্তায় দেহ রেখে অবরোধ করেন মৃতের পরিজনরা। এনিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিস আসে। পুলিসের সামনেই পলিক্লিনিকের সামনে দেহ রেখে অবরোধ, বিক্ষোভ চলতে থাকে। ঘটনার তদন্ত করে পদক্ষেপ নিতে দু’দিন সময় চায় পুলিস। কিন্তু মৃতের পরিজনরা সাফ জানিয়ে দেন, সময় দেওয়া যাবে না। কারণ এটা নিছক সাধারণ আত্মহত্যা নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। 

    মৃতের বাবা শঙ্কর ঝা’র অভিযোগ, পলিক্লিনিকের মালিক ও তাঁর স্ত্রী ছেলের উপর মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করেছেন। যার জেরে হয়তো ছেলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, ছেলেকে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেকারণে ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। 

    মৃতের পরিজনদের চাপে পড়ে এদিন বিকেলে তাঁদের সঙ্গে পলিক্লিনিকের মালিকের বাড়িতে যায় পুলিস। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ফ্ল্যাটে তালা। মোবাইল স্যুইচ অফ থাকায় পলিক্লিনিকের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মোবাইলে মেসেজ করলেও মেলেনি জবাব। 

    মৃতের পরিবারের দাবি, জলপাইগুড়ি শহরের ওই পলিক্লিনিকে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করতেন রাহুল। কিন্তু কর্মস্থলে যে এমন কিছু ঘটবে তা কোনওদিন ভাবতে পারেননি তাঁরা। মৃতের বাবা বলেন, শনিবার রাতে আমরা খবর পাই, পলিক্লিনিকের ভিতরে ছেলেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। ছেলের উপর মানসিক নির্যাতন চালানো হতো বলে জানতে পেরেছিলাম। আমাদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে খুন করতেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। 

    এদিকে, রাহুলকে উদ্ধারের পর কাছেই একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে রাহুলকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করা হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নার্সিংহোমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্সে ভাঙচুর চালায় একদল লোক। এরপর রাহুলকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই উত্তেজিত হয়ে ওঠে মৃতের পরিজনরা। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ ফের ওই পলিক্লিনিকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবার ও এলাকার লোকজন। পলিক্লিনিকে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা হয়। পুলিসের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি। এদিন ময়নাতদন্ত শেষে পরিবার দেহ হাতে পেতেই উত্তেজনা ছড়ায়। দেহ নিয়ে তাঁরা সটান চলে আসে পলিক্লিনিকের সামনে। সেখানে রাস্তায় দেহ রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ, অবরোধ।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)