• সোনামুখীতে পরপর দু’বার গুলি চলার ঘটনা! বাঁকুড়ায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে পুলিসের তল্লাশি
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: মাত্র চারমাসের ব্যবধানে সোনামুখীতে পরপর দু’বার গুলি চালনার ঘটনায় বাঁকুড়া জেলা পুলিস নড়েচড়ে বসেছে। জেলার সমস্ত থানাকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় বেআইনিভাবে বন্দুক, পিস্তল, কার্তুজ যাতে কেউ মজুত করতে না পারে, তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন। এবিষয়ে জেলা পুলিসের কর্তারা রিপোর্টও সংগ্রহ করছেন।

    বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, অন্য জেলার মতো বাঁকুড়ায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা নেই। মাঝেমধ্যে দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা জেলাজুড়ে নিয়মিত অভিযানও চালাই। তাতে খুব বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয় না। তবে সোনামুখীর গুলিকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বেআইনি ছিল। তাই আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। জেলার আর কোথাও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে কি না-তা জানতে আমরা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    সোনামুখীতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিও মাসচারেক আগে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল। ফলে দু’পক্ষের কাছেই যে দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল-তা স্পষ্ট। এর আগে ভোটের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রিগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৮ সালে বড়জোড়ায় পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র পেশে বাধা দেওয়ার সময়ও দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। বিষ্ণুপুর মহকুমার কয়েকটি জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা রয়েছে। তবে মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো বাঁকুড়া জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের খুব বেশি বাড়বাড়ন্ত নেই। পুলিস জানিয়েছে, বাম আমলে বাঁকুড়ার কোতুলপুর, জয়পুরে মাস্কেট বাহিনীর দাপট ছিল। সেই সময় ভিনজেলা থেকে এক ও দো’নলা বন্দুক আমদানি হতো। এলাকা দখলে ওই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হতো। সেসব আগ্নেয়াস্ত্রের খোঁজ এখনও মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। মাওবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দেওয়ার পর জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার হতো। এখন জেলার দুই প্রান্তেই শান্তি রয়েছে। ফলে আগের মতো মাস্কেট অথবা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয় না বললেই চলে। তবে কাটমানি, তোলাবাজির ভাগবাটোয়ারার জন্য দুষ্কৃতীদের মধ্যে রেষারেষি সারাবছর লেগে থাকে। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশও তাতে মদত দেয়। দাপট বজায় রাখতে দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখে। সুযোগ বুঝে তারা সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, দুষ্কৃতীরা সচরাচর বিপদে না পড়লে গুলি চালায় না। মূলত লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য তারা সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রাখে। সোনামুখীর ঘটনায় একপক্ষ প্রতিশোধ নিতেই গুলি চালিয়ে বিপক্ষ শিবিরের একজনকে খুন করেছে। তাড়াতাড়ি অভিযান না চালালে বিধানসভা ভোটের আগে এধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্য নিয়ে দুষ্কৃতীরা এলাকার ত্রাস হয়ে উঠতে পারে। আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। 

     মেজিয়া থানার বর্ডার এলাকায় চলছে নাকা চেকিং। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)