প্রেমিকের সঙ্গে পুরী যাওয়ার কথা জানাজানি হতেই যুগলের আত্মহত্যা
বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: স্ত্রী মিতালি সোনার অলঙ্কার, নগদ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাবেন বলে প্রশান্ত ঘোষ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। আগের দিনও তো তাঁর আচরণ স্বাভাবিকই ছিল। তিনি না খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। গ্রামে প্রশান্তবাবুর মুদিখানার দোকান রয়েছে। ঝাঁপ বন্ধ করে কখন তিনি খেতে বসবেন, তার অপেক্ষায় ছিলেন। রাতেও তাঁর পছন্দমতো খাবার তৈরি করেছিলেন। সেইসময় তিনি পরদিন বাপেরবাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব দেন। খেতে বসে মিতালি বলেছিলেন, তোমার মোবাইলটা সোনামুখীর একটি দোকানে অনেকদিন আগে ঠিক করতে দেওয়া ছিল। দোকান থেকে বারবার সেটি আনতে বলছে। তুমি কিছু টাকা দাও। আমি গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে আসি। চিন্তা করো না, দু’দিন বাপেরবাড়িতে থাকার পরই ফিরে আসব।
স্ত্রীকে বিশ্বাস করেছিলেন প্রশান্তবাবু। পরের দিন সকালে মিতালি বাপেরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁদের ১০ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। অজুহাত দেখিয়ে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাননি। মিতালির কাছেও একটি মোবাইল ছিল। হঠাৎ করে সেটি সুইচ অফ হয়ে যাওয়ায় প্রশান্তবাবুর সন্দেহ হয়। তিনি শ্বশুরবাড়িতে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়, মিতালি সেখানে যাননি। এরপরই তিনি আলমারি খুলে দেখেন, একটিও সোনার অলঙ্কার সেখানে নেই। নগদ কয়েক হাজার টাকাও নেই। এরপর তাঁর সন্দেহ আরও দৃঢ় হতে থাকে। পাশের গ্রামের সেই যুবকের সঙ্গে স্ত্রী চম্পট দেননি তো। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। প্রশান্তবাবু বলেন, স্ত্রীর বাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে রায়না থানায় যাই। নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ওই বধূর এক আত্মীয় বলেন, দু’দিন পর জানতে পারি, পাশের গ্রামের যুবকের সঙ্গে মিতালি পুরীর হোটেলে রয়েছে। ওই যুবক তাঁর এক বন্ধুকে ফোনে সেকথা জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়। তাঁরা দু’জন বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। জানাজানি হওয়ার পর তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। পরিবারের লোকজনের অনুমান, মিতালি প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার পরিকল্পনা নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি বাড়ি থেকে সোনা, রুপো এবং নগদ টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুরীর হোটেলে তাঁদের থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
এলাকার বাসিন্দারা বলেন, পাশের গ্রামের যুবক কুমারীশ ঘোষের সঙ্গে প্রায় দু’বছর ধরে মিতালির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তিও হয়েছিল। দু’পক্ষ বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি।