কারখানা গড়ার নামে নার্সিংহোম, শোরুম! হরির লুট এডিডিএ’র ১৩.৫৪ একর জমি
বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
সুমন তেওয়ারি, দুর্গাপুর: সালটা ১৯৭১। দুর্গাপুর স্টেশনের অদূরে পেল্লাই কারখানা করবে বলে জমি নিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। অতি কম দামে তৎকালীন দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছে থেকে নেওয়া হয়েছিল ১৩.৫৪ একর জমি। কারখানা আর হয়নি। উল্টে সেখানে রাতারাতি গড়ে উঠেছে জনবসতি। আর রাস্তার পাশের অংশে গড়ে উঠল নার্সিং হোম, বিভিন্ন সংস্থার বড় শোরুম। এখন জমজমাট এসবি মোড়। কারখানার জমিতে কী করে তা সম্ভব! তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, কারখানা মালিকই স্ট্যাম্প পেপার তৈরি করে সস্তায় জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই স্ট্যাম্প পেপারের ভরসাতেই জমি কিনে অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছেন অনেকে।
ফলত, পুরো কলোনিটাই গজিয়ে উঠেছে বেআইনিভাবে। এবার টনক নড়েছে এডিডিএ’র। ওই জমিতে কত বাড়ি গড়ে উঠেছে, কত দোকান রয়েছে, তা চিহ্নিত করতে শুরু হয়েছে সমীক্ষা। সেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে কতগুলি বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংস্থার দাবি, কোনওরকম সরকারি নথি না থাকায় তাঁদের কাছ থেকে কর আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারি কোষাগারের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে, ওই এলাকার বাসিন্দারাও বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় অবৈধ বসতি এলাকা নিয়ে কী করা সম্ভব, তা নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবের পরামর্শ চেয়েছে এডিডিএ কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, প্রথমে দুর্গাপুরের উন্নয়নের জন্য দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অর্থারিটি তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটাই আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের রূপ নেয়। শুধু এসবি মোড় এলাকা নয়। এডিডিএ’র জমি রীতিমতো হরির লুট হয়েছে। কেউ ফ্ল্যাক্টরি করবে বলে সস্তায় জমি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ আবার এডিডিএ জমি রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই অবৈধ কারবার এখনও চলছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর দুই মেগা সিটিতেই একটি অসাধু দালাল চক্র সক্রিয়। তাঁরা এক সময়ে ব্যক্তি মালিকানায় থাকা এডিডিএর জমি গুলি চিহ্নিত করে তা বিক্রি করে দিচ্ছে।
কী ভাবে তা সম্ভব? দীর্ঘ সময় ধরেই হাজার হাজার একর জমির মিউটেশন হয়নি এডিডিএ’র। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু চক্র। তারা এডিডিএর জমি অবৈধ ভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুট করছে। অন্যদিকে তাঁদের কাছ থেকে এডিডিএর জমি কিনে পরে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। এই প্রতারণার চক্র সমূল বিনাশ করতে তৎপর হয়েছে এডিডিএ। জেলাশাসক পোন্নমবলম এসের নেতৃত্বে জেলা ভূমি দপ্তরের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের জমিগুলি মিউটেশন করিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে সংস্থা। কাজের অগ্রগতির জন্য এডিডিএ একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করেছে। যাঁরা ভূমিদপ্তরকে সাহায্য করছে এই বিপুল জমির মিউটেশন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে। প্রশাসনের দাবি, একবার কোনও জমির মিউটেশন হয়ে গেলে সহজেই ক্রেতা জানতে পারবেন ওই জমির প্রকৃত মালিক কে। তিনি প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
এডিডিএ’র চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, এডিডিএর জমি জালিয়াতি করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। আমরা দ্রুত নিজেদের সব জমি মিউটেশন করিয়ে নিতে চাইছি।