পড়শি নেপালের হ্যান্ডলাররা মাধ্যম! ইউপি, বিহারের দুষ্কৃতীদের হাত ধরে ভারতে জাল নোট ছড়াচ্ছে পাকিস্তান
বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: এ রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফ। তাই, ভারতে জালনোট ঢোকাতে এখন নয়া কৌশল নিয়ে পাকিস্তানেরর কারবারিরা। ব্যবহার করা হচ্ছে নেপালি ‘হ্যান্ডলার’দের। নেপালও হয়েছে নতুন রুট। হ্যান্ডলাররা ওই রুটে হাই কোয়ালিটির নোট দেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সেগুলি পৌঁছে যাচ্ছে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের স্মাগলারদের হাতে। পরে, সময় –সুযোগ বুঝে তারা সেইসব পাকিস্তানি জালনোট ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সম্প্রতি একটি ঘটনার তদন্তে নেমে এনআইএ এমনই তথ্য পেয়েছে। নেপাল কানেকশনে তারা কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তাদের কাছে থেকে উন্নতমানের জালনোট উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের বাকিদের খোঁজে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংস্থা তল্লাশি জারি রেখেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর বিহারের চম্পারণ জেলায় বেশ কিছু জালনোট উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে তারা পকিস্তান এবং নেপাল সিন্ডিকেটের যোগ পায়। মহম্মদ নাজার সাদ্দাম, মহম্মদ ওয়ারিস, মহম্মদ জাকির হোসেন, মুজাফফর আহমেদ ওয়ারনি নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহম্মদ ফাসিউদ্দিন নামে আর এক পাচারকারীকে এনআইএ সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সলমান মহম্মদ নামে একজনের বিষয়ে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পাচারকারীরা জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে বৈঠক করে জাল নোট ঢোকানোর ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে। তদন্তকারীদের দাবি, শুধু ব্যবসা নয়, ভারতীয় অর্থনীতিকে ধাক্কা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নেপাল সীমান্ত ব্যবহার করে জালনোট ঢোকানো হচ্ছে। টাকার লোভে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের স্মাগলাররা তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা এ রাজ্যেও বিহার থেকে জালনোট ছড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার মদতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও জালনোট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলির মান ততটা উন্নত নয়। কিন্তু পাকিস্তানে তৈরি নোট গুলির মান অনেক উন্নত। আসল এবং নকলের সঙ্গে ফারাক বোঝা রীতিমত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। জালনোট কতটা উন্নত হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে কাগজের মানের উপর। এছাড়া অত্যাধুনিক মেশিনও দরকার হয়। ‘পুশব্যাক’ শুরুর আগে পর্যন্ত পাচারকারীরা এরাজ্যের বৈষ্ণবনগর বা সামশেরগঞ্জের কয়েকটি এলাকা বেশি ব্যবহার করত। বাংলাদেশের ক্যারিয়াররা সহজেই ওপার থেকে এসে নোটের ব্যাগ পৌঁছে দিত। এখন সেই ছবির অনেকটাই বদল হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি বাড়িয়েছে। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ওঁত পেতে রয়েছে। সেই কারণে এই রুট তারা বেশি ব্যবহার করার ঝুঁকি নিচ্ছে না। নেপালের রুট তাদের কাছে এখন অনেক বেশি নিরাপদ। সেখান নতুন নতুন হ্যাণ্ডলার নিয়োগ করেই তারা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এক লক্ষ টাকার জালনোট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে এদেশে ঢোকাচ্ছে। কখনও কখনও রেট আরও কমে যাচ্ছে। এক আধিকারিক বলেন, সম্প্রতি কয়েকজনকে পাকড়াও করে নতুন সিন্ডিকেটের সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেসব ইনপুট কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেটের কোমর ভাঙার তোড়জোড় শুরু করেছেন গোয়েন্দারা ।