• মা মনসাকে তুষ্ট করে লক্ষ্মীলাভ, কোটি টাকারও বেশি হাঁস বিক্রি পুরুলিয়া জেলায়
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: রবিবার বিষহরির আরাধনায় মেতে উঠলেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা। মা মনসার প্রধান নৈবেদ্য হাঁস। পুজোর রাতে হাঁস বলি দিয়ে পরেরদিন মাংস ভাত খাওয়া হয়। এটাই রেওয়াজ সাবেক মানভূমের। সেই হাঁস দিয়ে দেবী মনসাকে সন্তুষ্ট করতে কালঘাম ছুটল বাসিন্দাদের। রবিবার বাসিন্দাদের হাঁস কেনার ধুম ছিল দেখার মতো। শেষ বেলায় পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশতেও বিক্রি হল একটি হাঁস। তবে, শুধু হাঁসই নয়, সব্জি থেকে শুরু করে ফলের বাজার করতে গিয়েও হাত পুড়ল ক্রেতাদের। তবে, বেচাকেনা ভালো। বেজায় খুশি বিক্রেতারা। 

    শ্রাবণ সংক্রান্তি ও মকর সংক্রান্তি—এই দুইই কার্যত প্রধান উত্সব পুরুলিয়াবাসীর। দুর্গাপুজোর থেকেও ধুম বেশি পড়ে দুই উত্সবে। দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে জেলার বাইরে থাকা লোকজন বাড়ি না ফিরলেও শ্রাবণ সংক্রান্তির মনসা পুজোয় সকলে ফিরবেনই। পুরুলিয়াতেই শুধু নয়, বাঁকুড়া জেলাতেও প্রভাব রয়েছে এই শ্রাবণ সংক্রান্তির। প্রতি বছরই শ্রাবণ সংক্রান্তিতে জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মানুষদের কাছে লোকদেবী মনসার বন্দনা অন্য মাত্রা পায়। জানা যায়, জল, জমি, জঙ্গলে নিয়ে যাঁদের দিন কাটে, প্রতি মুহূর্তে সাপের ভয় যাঁদের কাজের অঙ্গ— সেই সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষজনই এই পুজো করেন।  তাঁদের বিশ্বাস, মানসা যে হেতু সর্পের দেবী, তাই দেবীকে তুষ্ট রাখলে সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর তাই, এ দিন প্রতিটি পরিবার দেবীকে নিবেদন করেন অন্তত একটি হাঁস।  মনসা পুজোয় অঘোষিত বনধের চেহারা নেয় পুরুলিয়া। কোটি টাকার হাঁস কেনাবেচা হয় মনসা পুজো উপলক্ষ্যে। এবছরও যার অন্যথা হয়নি। গত কয়েকদিন থেকেই হাঁস কিনতে জেলার বাজারগুলোতে ভিড় ছিল বাসিন্দাদের। রবিবার সকালেও হাঁসের কেনাবেচা হয়। বাজারে ক্যাম্বেল হাঁসের সংখ্যা বেশি থাকলেও এদিন দেশি হাঁসের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। চড়া দামে দেশি হাঁস বিক্রিও হয়। হাঁসের আকার অনুযায়ী তিনশ, সাড়ে তিনশ থেকে শুরু করে শেষ বেলায় পাঁচশো, সাড়ে পাঁচশো টাকা দরেও হাঁস বিক্রি হয়। তবে, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বহু বাজারে আবার হাঁসের দাম বেঁধে দেয় বাজার কমিটি। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুরুলিয়ায় অন্তত কোটির টাকার হাঁস বিক্রি হয়েছে মানসা পুজো উপলক্ষ্যে। এদিন সকাল থেকে বিকালের মধ্যে পুরুলিয়া শহরের কোর্ট রোডের কাছে পাঁচ হাজার হাঁস বিক্রি করেছেন বলে দাবি ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আনসারির। তিনি বলছিলেন, ‘পাঁচ হাজার হাঁস নিমেষের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেল। বিকেলের আগেই সব হাঁস শেষ।’ ওই বাজারেই বিক্রেতা ব্যবসায়ী নির্মল রায় বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় যোগান কম ছিল। পাঁচশো হাঁস নিয়ে বসেছিলাম। দুপুরের মধ্যেই সব শেষ।’ 

    হাঁস ছাড়াও সব্জি, ফলের বাজার করতে গিয়েও পকেটে টান পড়েছে বাসিন্দাদের। শনিবার বিভিন্ন বাজারেই আনাজের দাম ছিল চড়া। এদিন পটল ও বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ভেন্ডি ৮০ টাকা, টম্যাটো ৮০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)