সেশনের সময় পার, ঠান্ডাঘরে মেরিট লিস্ট, কলেজে পড়ুয়াদের ভর্তি নিয়ে সংশয়ে অধ্যক্ষরা
বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তমলুক ব্লকের কুলবেড়্যা ভীমদেব আদর্শ বিদ্যাপীঠের গৌরাঙ্গ দাস, শেখ মেহতাব আবেদন করেও কলেজে ভর্তি হতে বিমুখ। কারণ, ১৮ জুন থেকে অনলাইন আবেদন শুরু হলেও এখনও কলেজে ভর্তি শুরুই হয়নি। কবে থেকে ভর্তি শুরু হবে, তা নিয়ে কলেজে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনও তথ্য পাচ্ছেন না। অগত্যা তমলুক ব্লকের উত্তর সোনামুই গ্রামের মেহেতাব টাইলসের কাজ করতে ওড়িশায় চলে গিয়েছেন। আর, পায়রাচালির গৌরাঙ্গ দাস নিমতৌড়ির একটি দোকানের কর্মী। তাঁরা দু’জনেই কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সরকারি গড়িমসিতে বিরক্ত দুই পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষা নিয়ে হতাশ। কলেজে ভর্তির পরিবর্তে তাঁরা রোজগারের দিকে ঝুঁকেছেন। শুধু মেহতাব কিংবা গৌরাঙ্গ নয়, তাঁদের মতো দলে দলে পড়ুয়া কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করার পরও হতাশ। কাজের খোঁজে কেউ ভিন রাজ্যে আবার কেউ নিজের এলাকায় বিভিন্ন দোকানে, নার্সিংহোমে কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। কলেজে ভর্তি নিয়ে সরকারি উদাসীনতায় তাঁরা হতাশ। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, একইসঙ্গে হতাশ হয়েছেন বিভিন্ন কলেজের প্রিন্সিপাল ও অভিভাবকও। কলেজে ভর্তি নিয়ে যেভাবে গড়িমসি চলছে তাতে প্রত্যেকেই বিরক্ত।
কুলবেড়্যা ভীমদেব আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বেরা বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বহু পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহ না দেখিয়ে ভিন রাজ্যে কিংবা নিজের এলাকায় নানা কাজে জড়িয়ে পড়েছিল। এখন দেখতে পাচ্ছি, ভর্তির জন্য আবেদন করা পড়ুয়ারাও লাইন দিয়ে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। আমাদের স্কুলের বেশ কয়েকজন পড়ুয়া কলেজে ভর্তির আবেদন করার পর এখন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আগ্রহী নয়। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক ছবি।
এবছর ৭মে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশ হয়। প্রায় দেড় মাস বাদে গত ১৮জুন থেকে কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। তিন দফায় সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করে ৪আগস্ট পর্যন্ত পোর্টাল খোলা ছিল। তারপর দু’সপ্তাহ সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হয়নি। প্রথম দফায় ভর্তি কবে থেকে সেটাও অজানা। এই অবস্থায় আবেদনকারী অনেক ছাত্র হতাশ। ব্যাগপত্র গুছিয়ে ওড়িশা, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে রওনা দিচ্ছেন। প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। এরফলে কলেজে আদৌ ছাত্র মিলবে তো? বিভিন্ন কলেজের প্রিন্সিপালদের মধ্যেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২টি ডিগ্রি কলেজে মোট ৭৪হাজার ৩৮১আসন। এবছর ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন করেছেন মাত্র ২৬হাজার ৩৮৪জন। প্রত্যেক আবেদনকারী কলেজে ভর্তি হলেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁকা থাকছে ৪৮হাজার আসন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক কলেজে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যার মতো বিষয়ে আবেদনই জমা পড়েনি। আসন সংখ্যাত তুলনায় আবেদন অপ্রতুল হওয়ায় এমনিতেই অধ্যক্ষরা হতাশ। তারপর ভর্তি হতে অযথা দেরি হওয়ায় আবেদনকারীরাও উচ্চশিক্ষা আশা ছেড়ে নানা কাজে জড়িয়ে পড়ছেন।
১জুলাই থেকে কলেজে স্নাতকের ফার্স্ট সেমেস্টারের সেশন শুরু হওয়ার কথা। অর্থাৎ, ওইদিন থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর জানুয়ারি মাস থেকে সেকেন্ড সেমেস্টারের ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু, আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এখনও মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হল না।
প্রথম দফার ভর্তি কবে থেকে শুরু সেটা এখনও উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে জানানো হয়নি। মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজের প্রিন্সিপাল স্বপনকুমার মিশ্র বলেন, এবছর কলেজে ছাত্রছাত্রী পেতে বড় সমস্যা হবে। কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রিন্সিপাল অমিতকুমার দে বলেন, সেশন অনেকটা দেরিতে শুরু হলে নানা সমস্যা হয়। তাই আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।