নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হস্টেলের দরজা ভাঙা। নেই কোনও রক্ষী। নিরাপত্তার ন্যূনতম বেষ্টনীটুকুও নেই। সেখানেই দিনের পর দিন থাকছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ছাত্রীরা। সেই হস্টেলের একতলার বারান্দায় রাতভর লুকিয়ে চোর!
রবিবার ভোররাতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রীর মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই করে চম্পট দিল দুষ্কৃতী। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রী। তার ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে পুলিস। এদিন শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে পারেননি তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ছাত্রীরা। তার জেরে হস্টেলের সামনেই এদিন বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।
রবিবার ভোররাত ৩টে নাগাদ চুরির ঘটনাটি ঘটে। আচমকা একটি শব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙে হস্টেলের এক ছাত্রীর। তাঁর নাম সায়ন্তনী চক্রবর্তী। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ঘুম ভাঙতেই তিনি দেখেন, তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েছে এক যুবক। মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। চিৎকার করতে গেলে তাঁর মুখ চেপে ধরে দুষ্কৃতী। ধাক্কা মেরে সে ফেলে দেয় ছাত্রীকে। এরপর বিছানার পাশে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। আর্তনাদ শুরু করেন পড়ুয়া। বেরিয়ে আসেন অন্যান্য ছাত্রীরা। কিন্তু, হস্টেলে কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় বিনা বাধায় পালিয়ে যায় দুষ্কৃতী।
সায়ন্তনীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানান তিনি। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, পুলিসে অভিযোগ না করার জন্যও বলা হয় বলে দাবি পড়ুয়ার। এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ পাঠালেও তার উত্তর দেননি। অগত্যা রবিবার সকালে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার দ্বারস্থ হন সায়ন্তনী। ঘটনাস্থলে যায় পুলিস। অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আশপাশের দোকান ও রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিস। লালবাজার জানিয়েছে, দ্রুত অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
কিন্তু, রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতী কীভাবে ছাত্রী হস্টেলে ঢুকে এক আবাসিকের ঘরে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আতঙ্কে রয়েছেন অন্যান্য পড়ুয়ারা। এক ছাত্রীর দাবি, ঘর ভেঙে পড়ছে। অনেক জায়গায় দরজা নেই। মূল দরজায় কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। এদিন এই প্রশ্ন তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পড়ুয়া বিক্ষোভ দেখান। সেখানকার ছাত্র রনি ঘোষ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ অপদার্থ। ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ভাইস চ্যান্সেলর রাজনীতি করতে ব্যস্ত।’ - নিজস্ব চিত্র