• বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতারের বাজি, ঝিলে ডুবে মর্মান্তিক পরিণতি নাবালকের
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: সাঁতার কেটে ঝিলের অপর প্রান্ত ছুঁয়ে ফের ফিরে আসতে হবে এপারে। এই শর্তকে সামনে রেখে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি লড়েছিল সে। কিন্তু ঝিলের মাঝখান থেকে আর পাড়ে ফিরে আসতে পারেনি বছর সতেরোর কিশোর মহম্মদ সুফিয়ান। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালের পিছনে একটি ঝিলে। প্রায় তিন ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয় দেহ। বাড়ি বাঁকড়ার মণ্ডলপাড়ায়। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন শহরবাসী।

    পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকড়া এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করত সুফিয়ান। একসঙ্গে স্নান করতে যাবে বলে সকাল ৯টা নাগাদ কয়েকজন বন্ধু সুফিয়ানের বাড়িতে আসে। বাড়ির লোকজন নিষেধ করলেও সে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালের পিছনেই রয়েছে একটি বড় ঝিল। দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। গভীরতাও ভালো। স্থানীয়রা অনেকেই কাপড় কাচা, স্নানের জন্য ঝিলটি ব্যবহার করেন। সুফিয়ান ও তার বন্ধুরা যখন স্নান করতে নামে, তখন আশপাশে কেউ ছিল না। জানা গিয়েছে, জলে নামার আগে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে সুফিয়ান। সাঁতরে ওপারে গিয়ে যে সবার আগে ফিরে আসতে পারবে, সে জিতবে বাজি। ওপারে সকলে পৌঁছে গেলেও ফেরার সময় মাঝামাঝি অংশে এসে হাঁপিয়ে যায় সুফিয়ান। এক বন্ধু তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। তাদের সামনেই জলে তলিয়ে যায় সুফিয়ান। পাড়ে উঠে এসে চিৎকার করে স্থানীয়দের ডাকে বন্ধুরা। খবর পেয়ে ছুটে আসে বাঁকড়া ফাঁড়ির পুলিস। আসে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও (ডিএমজি)। জাল ফেলে, ডুবুরি নামিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তন্নতন্ন করে খোঁজার পর দেহ উদ্ধার করেন ডিএমজির সদস্যরা।

    মৃতের এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিস। জেরায় ওই কিশোর জানিয়েছে, ঝিলের মাঝখানে হঠাৎ সুফিয়ান ডুবতে শুরু করলে সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাকে আঁকড়ে ধরে যেভাবে ছটফট করছিল সুফিয়ান, তাতে দু’জনেরই ডুবে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় আচমকা হাত ফস্কে গেলে ডুবে যায় সে। মৃতের পরিবারের দাবি, সুফিয়ান ভালো সাঁতার জানত। তারপরেও সে ডুবে গেল কীভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। হাওড়া সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেন, ‘দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।

    গত কয়েক মাসে জলে ডুবে একাধিক কিশোর ও যুবকের মৃত্যু হয়েছে শহরে। গত ৯ আগস্ট সাঁকরাইলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ডাইভিং পুলে ডুবে মৃত্যু হয় কপিল কুমার নামের হিমাচল প্রদেশের এক পড়ুয়ার। গত ১৫ জুন ডুমুরজলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি ঝিলে স্নান করতে নেমে মৃত্যু হয় অভিজিৎ শর্মা নামের এক কিশোরের। দোলের দিন দুপুরে বালিটিকুরিতে পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় অরিজিৎ মেটে নামের এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। অনেকেই বলছেন, ‘বড় বড় পুকুর ও জলাশয়গুলিকে ফেন্সিং দিয়ে ঘিরে দিলে ভালো হয়। সব সময় নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না। এতে দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যাবে’।
  • Link to this news (বর্তমান)