• পুজোর ফ্যাশনে হিট ভাষা আন্দোলন, টি-শার্টে ‘বাংলাদেশি নই, বাঙালি’, ‘আমার ভাষা, আমার গর্ব’
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • সোহম কর, কলকাতা: এবছর পুজোর ফ্যাশনে রাজনীতি। এবছর পুজোয় টি-শার্টে রাজনৈতিক ভাষ্য। আর তাই, সেই স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে আম বাঙালির প্যাশনে থাকা রাজনীতি এবছরের ফ্যাশনেও। 

    বাচ্চা-বুড়ো, তরুণ-তরুণী পুজোর শপিং শুরু করে দিয়েছে। অনেকে গায়ে চড়িয়েও ফেলেছে নতুন জামা-টি শার্ট-জিন্স। তাঁদের অনেকের শার্টে লেখা, ‘বাংলাদেশি নই, বাঙালি’। কারও টি শার্টে ‘আমার ভাষা, আমার গর্ব।’ কেউ পরেছেন সাদা গেঞ্জি। তাতে ‘বাংলাদেশি’ লেখাটি কাটা। ‘বাঙালি’ শব্দটির পাশে টিক চিহ্ন। অর্থাৎ আপাত নিরীহ কিন্তু সাংঘাতিক কিছু রাজনৈতিক মন্তব্য লেখা টি শার্টই হয়ে উঠেছে এবছর বাংলার পছন্দের। এবং হয়ে উঠেছে বাঙালি অস্মিতার নয়া চিহ্ন, বক্তব্য জানানোর ধারালো হাতিয়ার। টি শার্ট নির্মাতারাও বলছেন, ‘এটাই এখন বেস্ট সেলার।’

    গড়িয়াহাটে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক অধ্যাপক। বিদেশে অধ্যাপনা করেন। ছুটিতে কলকাতায় বাড়ি এসেছেন। পরেছেন ‘বাঙালি’ টিক দেওয়া গেঞ্জি। বললেন, ‘ওগুলো সব অর্ধশিক্ষিত। ভাবে, বাংলায় কথা বলে শুধু বাংলাদেশিরা। পড়াশোনা কিছুই করে না, এসব কথা শুনলেই বোঝা যায়।’ অরুণাভর মতো বিদেশে থাকা মানুষও যেমন মাতৃভাষার জাত্যভিমানে আঘাত লাগায় টি শার্টের লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তেমনই গোটা শহর এক হয়ে পোশাককে করে তুলেছে হাতিয়ার। সবমিলিয়ে ‘ফ্যাশনে প্রতিবাদ’ বিষয়টিকে বাঙালি রপ্ত করেছে ভালোভাবেই। টি শার্টে চে গেভারা থেকে ভগৎ সিং তো ছিলই। এসব কিছুর মধ্যেই মিলেমিশে থাকত বাঙালির দুর্গাপুজো। এবারও উৎসবকে বাংলা ভাষায় উপর নেমে আসা আক্রমণের প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে শহর। বাংলায় লেখা এই টি শার্ট মূলত তৈরি করছে বং মেড নামে এক সংস্থা। প্রতিষ্ঠাতা অনিন্দ্য সাঁই বললেন, ‘আমার ভাষা নিয়ে এই সংকটের সময় ডিজাইনটা তৈরি করলাম। চলতি মাসে এটাই আমাদের বেস্ট সেলার।’ এরকম অনেক সংস্থাই আছে, যারা সরাসরি না লিখলেও ‘আমার ভাষা, আমার গর্ব’ জাতীয় লাইন লিখেছে তাদের তৈরি টি-শার্টে। সেরকম একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হল, গত এক মাসে ‘বাংলাভাষা ভালোবেসে’ এই ধরনের টি-শার্টের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বিদেশে থাকা মাঝবয়সিরা কিনছেন।

    একসঙ্গে অনেক মানুষকে এককাট্টা করে উৎসব। সেই উৎসবে ফ্যাশনের মাধ্যমে সংগ্রামী রাজনীতির উন্মেষ এ বছর ঘটাতে চাইছে বাঙালি। এসব দেখে কেউ অবশ্য বলছেন, ‘সুযোগ বুঝে ব্যবসা করে নিচ্ছে। দাম করেছে সাড়ে ৫০০ টাকা!’ তবে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা উত্তরও আসে, ‘ব্যবসা করতেই তো এসেছে ওরা। কিন্তু প্রতিবাদের হাতিয়ারও তো সাপ্লাই দিচ্ছে।’ বিবাদ চলছে। চলতেও থাকবে। তবে সব ছাড়িয়ে বেড়েই চলবে মাতৃভাষার প্রতি টান, বাড়঩বে মমতা, ভালোবাসা। আর কে না জানে, ঘৃণার থেকে ভালোবাসা বেশি ছোঁয়াচে।
  • Link to this news (বর্তমান)