• বিবেকের নাম না-করে নিজের বিবেকের ডাকে ময়দানে চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ! বিষয় বাঙালি ও বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস
    আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
  • ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ নিয়ে বিতর্কের আবহে এ বার মুখ খুললেন চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ। রবিবার একটি ভিডিয়োবার্তায় দেশভাগের যন্ত্রণার ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোভাগে বাংলা থাকলেও, কী ভাবে তাকেই দেশভাগের শিকার হতে হয়েছিল, তা-ও তুলে ধরেন এই বর্ষীয়ান চিত্রপরিচালক। তবে নিজের বক্তব্যে এক বারও বিতর্কিত ওই সিনেমা এবং তার পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর নামোল্লেখ করেননি গৌতম। না-করলেও তাঁর নিশানায় যে ওই ছবি এবং তার নির্মাতারাই, তা স্পষ্ট।

    ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্টের কলকাতা দাঙ্গাকে ভিত্তি করে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ সিনেমাটি বানিয়েছেন বিবেক। অভিযোগ উঠেছে, ‘ইতিহাস’ দেখানোর নামে আসলে ওই সিনেমার মাধ্যমে বাংলায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। সেই আবহেই গৌতমের এই বার্তা। মূলত বাংলাভাষায় কাজ করলেও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে গৌতমের একটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে। একাধিক সিনেমা কিংবা তথ্যচিত্রের জন্য তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার।

    নিজের বার্তায় বাংলা এবং বাঙালির সংগ্রামের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন গৌতম। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, “১৯৪৭ সালে আসলে কি ভারত ভাগ হয়েছিল? ভাগ হয়েছিল বাংলা আর পঞ্জাব। যে দেশের মানুষরা সব থেকে বেশি লড়াই করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, তাদের ভাগ করা হল।” স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী চিত্রপরিচালক। বলেন, “আপনারা যদি আন্দামানের সেলুলার জেলে যান, দেখবেন একটা লম্বা ফলক রয়েছে। সেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ হচ্ছে বাঙালির নাম। তার পর পঞ্জাবিরা। তার পর কিছু কিছু অন্য জাতির মানুষেরা। ফলে বোঝাই যায়, কারা লড়াই করেছিল।”

    গৌতম তাঁর ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, “বাংলা ভাগের অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু সেই কারণগুলো নিয়ে যদি কাজ করতে হয়, তবে গবেষণা করতে হয়। এবং দাঙ্গা বা দেশভাগ কেন হয়েছিল, তা ভাবতে হয়।” মনে করা হচ্ছে, বিবেকের নাম না-করলেও এই কথা বলে অগ্রজ হিসাবে বয়স এবং অভিজ্ঞতায় নবীনকে পরামর্শই দিয়েছেন গৌতম। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “বাংলাকে অনেক বার অপদস্থ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। বাংলাকে হেনস্থা করা আগেও সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বাঙালি সেটা করতে দেবে না।” বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ বলতেও শোনা যায় গৌতমকে।

    কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ‘যন্ত্রণার ইতিহাস’ তুলে ধরতে এর আগে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ নামের একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন বিবেক। বিজেপি শিবির সেই সিনেমার প্রশংসা করলেও, অনেকেরই মতে ছবিটি একদেশদর্শী এবং উগ্র ভাবে রাজনৈতিক প্রচারসর্বস্ব। বছর দুয়েক আগে বিবেক বাংলাকে নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। বাংলার পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই তিনি ওই ছবির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে কলকাতার বাইপাস লাগোয়া একটি হোটেলে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ সিনেমার ট্রেলার লঞ্চে প্রথমে হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং পরে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন বিবেক। তার পরেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। যদিও পুলিশের তরফে জানানো হয়, এই বিষয়ে বিবেক বা নির্মাতাদের তরফে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি। শহরে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে সিনেমার প্রচারের বিষয়েও পুরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয়।

    রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের তরফে বিবেকের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “নাটক করছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। নামে পরিচালক, কিন্তু তিনি যেগুলো তৈরি করেন, সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ানোর জন্য।” কেন বিবেক গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সিনেমা তৈরি করছেন না, সেই প্রশ্ন তোলা হয় তৃণমূলের তরফে। বিজেপির অবশ্য দাবি, সত্য ঘটনা অবলম্বনেই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। সত্যটা দেখানো হলে তৃণমূলের ভয় কিসের বলে প্রশ্ন তুলেছে পদ্মশিবির। ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই এই বিষয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে মুখ খুলেছেন। এ বার নাম না-করেই বিবেক এবং তাঁর সিনেমার সমালোচনা করে ভিডিয়োবার্তা দিলেন গৌতম।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)