• ‘বলল দৌড়ো, না হলে গুলি খাবি’
    আনন্দবাজার | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • কালিয়াচক: জীবনে প্রথম বার বিমানে চড়া।

    সে অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে চান আমির শেখ।

    মালদহের কালিয়াচকের বছর চব্বিশের এই পরিযায়ী শ্রমিকের অভিযোগ, বিমানে চাপিয়ে তাঁকে কলকাতায় এনে, উত্তর ২৪ পরগনার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে জোর করে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে। তাতে ভূমিকা ছিল রাজস্থান পুলিশ এবং বিএসএফের (সীমান্তরক্ষী বাহিনী)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাবা-কাকার সঙ্গে কালিয়াচকের জালালপুরের বাড়িতে ফেরা আমির এখন খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। শনিবার ব্লক প্রশাসনের সহযোগিতায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আমিরকে ডাক্তার দেখানো হয়। তার পরে তাঁর বাবা জিয়েম শেখ বলেন, ‘‘বিনা অপরাধে ছেলের উপরে অত্যাচার হল। এর বিচার হোক।’’

    তিন মাস আগে রাজস্থানের প্রতাপনগরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যান আমির। সেখানে এক দিন আচমকা বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁকে আটক করে রাজস্থান পুলিশ। আমিরের ক্ষোভ, ‘‘জন্মের শংসাপত্র, আধার কার্ড দেখানোর পরেও বাংলাদেশি বলে আমাকে বিনা বিচারে জেলে দু’মাস আটকে রাখে ওরা। তার আগে বেল্ট, লাঠি দিয়ে পায়ে প্রচণ্ড মারে। খোঁড়াচ্ছি সে-ই থেকে। যন্ত্রণায় কাতরালেও ওষুধ দেওয়া হয়নি।’’ যুবক জানান, রাজস্থানের জেলে থাকাকালীন রান্না করে খেতে হত তাঁকে। আনাজ তো দূরস্থান, চাল, আলুও কম দেওয়া হত। রাজস্থান পুলিশ ২২ জুলাই বিমানে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসে। তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতা থেকে বিএসএফের গাড়িতে বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএসএফ সীমান্তের দরজা খুলে, আমাকে হুমকি দেয়, এ বার সোজা দৌড়ো। না হলে গুলি খাবি। ভয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য হই।’’

    সে দেশে পা রাখতেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আমিরকে আটকায়। আটক করার মুহূর্তে ‘এ দেশে আমার কেউ নেই’ বলে আমিরের ভেঙে পড়ার ‘ভিডিয়ো ক্লিপ’ ছড়ায় সমাজমাধ্যমে। গত ২৪ জুলাইয়ের সে ‘ক্লিপ’ দেখে আমিরকে দেশে ফেরাতে কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর পরিবারকে মামলা করতে সহায়তা করেন পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। রাজ্যসভার সাংসদ তৃণমূলের সামিরুল এ দিন বলেন, ‘‘রাজস্থানের পুলিশ, বিএসএফ কাউকে ছাড়ব না। আদালতে সব তথ্য দেব।’’

    বাংলাদেশ থেকে ফিরলেন কী ভাবে? আমির বলেন, ‘‘সাতক্ষীরা জেলে ২০ দিন বন্দি ছিলাম। সেই সময়ে জানি না কে আমার জামিন করান। ১২ অগস্ট রাতে বিজিবি আমাকে বসিরহাট সীমান্তে নিয়ে আসে। সীমান্তের আলো নিভিয়ে আমাকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’’ যদিও বিএসএফ আগেই দাবি করেছিল, আমিরকে সীমান্তে ঘোরাফেরা করতে দেখে আটক করে তারা বসিরহাট পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ দিন আমিরের অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে মন্তব্য করতে চাননি বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ রেঞ্জের ডিআইজি নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে। আমিরকে ছাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিএসএফের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমিরের পাশে প্রথম থেকেই আছি। ওঁর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেব।”

    এক ধাপ এগিয়ে আমির-প্রসঙ্গে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী। মালদহের ইংরেজবাজার শহরের রথবাড়িতে শুক্রবার দলের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে তাঁর মন্তব্য, “বিজেপি নেতাদেরও মারতে-মারতে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করে দেব। আর পরে ক্ষমা চেয়ে নেব।” বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুর জবাব, “সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষীদের অসম্মান করা তৃণমূল আর কংগ্রেসের কাজ। আমিরের তরফে কোনও ভুলচুক হয়ে থাকবে।” আমিরের বাবা বলেন, “যাদের ভুলচুক হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছি।”

    ফেরত যাবেন রাজস্থানে? মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দৃশ্যতই বিচলিত আমির বলেন, “এ রাজ্যে কাজ পেলে, কেন ভিন‌্-রাজ্যে যাব?”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)