জন্ম নিয়েছে শিশুকন্যা, তাতেই মুখ ভার পরিবারের— এক সময় এই চিত্র হামেশাই দেখা যেত গ্রামেগঞ্জে। এখন সময় অনেক পাল্টেছে। মেয়ে হলেই পরিবারের মুখ ভার, এই ছবিতেও অনেক বদল এসেছে। কন্যা সন্তান জন্ম নিলে, আনন্দ-আহ্লাদে ভরে যায় অসংখ্য অভিভাবকের মন। কীর্ণাহারের সাদিনগরে শনিবার দেখা গেল তেমনই চিত্র।
হাসপাতাল থেকে নবজাতিকাকে গাড়ি সাজিয়ে, বাজনা বাজিয়ে বছর দেড়েক আগে বাড়িতে এনেছিলেন কীর্ণাহারের মনোজ ও সুপর্ণা ঘোষ। এ বার সে পথ অনুসরণ করে কীর্ণাহারেরই সাদিনগর গ্রামের ছোট্টু শেখ ও নাসরিন খাতুন তাঁদের মেয়ে রূপসাকে বোলপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এলেন সাজানো গাড়িতে। সদ্যোজাতের গৃহপ্রবেশ হল ফিতে কেটে।
ছোট্টু শেখরা তিন ভাই। তাঁদের বাড়িতে কন্যা সন্তানও আছে। তা সত্ত্বেও রূপসার আগমনে বাড়িতে তৈরি হয়েছে উৎসবের পরিবেশ। মঙ্গলবার মেয়ের জন্মের পরেই ছোট্টু মিষ্টিমুখ করান পরিচিত, পরিজন ও বন্ধুদের। গ্রামেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি, সেখানেও খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার দুপুরে সাজানো গাড়ি চড়ে মেয়ে নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই সকলে তার গৃহপ্রবেশ করান ফিতে কেটে। এরপরেই একরত্তিকে কোলে তুলে নেন ছোট্টুর বাবা কুদ্দুস শেখ, মা মর্জিনা বিবি, শ্বশুর ডালু শেখ ও শ্বাশুড়ি নূর নেহার বিবি। তাঁরা জানান, কন্যাশিশুর জন্মে মন খারাপের কথা তাঁরা কখনওই ভাবেননি। পুত্রসন্তান কামনাও আলাদা করে কোনওদিন করেননি তাঁরা।
বছর ছাব্বিশের ছোট্টু মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের একটি বেকারি কারখানায় শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি বাড়ি এসেছেন তিনি। ছোট্টুর কথায়, “ছেলে বা মেয়ের পার্থক্য কোনওদিন বুঝিনি, ঘরে দুই ভাইঝি আছে, ওদেরও সব সময় নিজের সন্তানের মতোই দেখেছি। আমার মেয়ে ভবিষ্যতে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুক, সকলে ওকে আর্শীবাদ করুন।” নাসরিন বলেন, “ও আমার জীবনের সব থেকে বড় উপহার, ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক।”
গাড়ি সাজিয়ে কন্যাকে বাড়ি নিয়ে আসার পুনরাবৃত্তিতে খুশি কীর্ণাহারের মনোজ-সুপর্ণাও। তাঁরা জানান, সমাজের এক অন্ধকার দিক ধীরে ধীরে আলোয় ভরে উঠছে। এ ভাবেই প্রতিটি পরিবারে আনন্দ বয়ে আনুক শিশুকন্যারা।