ক্ষতিগ্রস্ত জলাধার, বসে যাওয়া পিলার। তা দেখতেই ভিড় অত্যুৎসাহী জনতার। সঙ্গে দেদার নিজস্বী, জল ছাড়ার ছবি তোলা, ভিডিয়ো করা আর রিল বানানোর হিড়িক। আশঙ্কা, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। ভিড় সামলাতে ঘাম ছুটছে সেচ দফতর ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের। পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘রাস্তা ও জলাধারের উপর নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। কেউ যাতে অহেতুক ভিড় না করেন, সে দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।’’
সম্প্রতি তিলপাড়া জলাধারের জলবিভাজিকায় ফাটল দেখা যায়। এরপরেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলাধারের উপরের রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই খবর চাউর হতেই ভিড় জমাতে শুরু করেন সিউড়ি ও আশপাশের এলাকার অত্যুৎসাহী মানুষজন। জানা গিয়েছে, জলাধারের যে অংশে ফাটল ধরেছে, অত্যুৎসাহী জনতা সেখানে গিয়েই ছবি তুলছে। অনেকে ছোট ভিডিয়ো বা রিল বানাচ্ছেন। চলছে ফাটলের ছবি তোলা ও ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার চেষ্টাও। জলাধার থেকে ক্রমাগত জল ছাড়ার ভিডিয়ো ফোনবন্দী করতেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
আমজনতার এই প্রবণতাতেই রীতিমতো চিন্তিত পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মানুষের অতি উৎসাহ রুখতে পুলিশের পক্ষ থেকে জলাধারের দু’দিকে ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে। ‘বিপজ্জনক এলাকা, সাধারণের প্রবেশ নিষেধ’ লেখা ব্যানারও দেওয়া হয়েছে। তবে ওই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই চলছে ছবি ও ভিডিয়ো তোলার হিড়িক। এমনকি মানুষের এমন ভিড় দেখে জলাধারের পাশে একটি অস্থায়ী খাবারের দোকানও খুলে গিয়েছে। ব্যবসা করছে সেই দোকানেরও। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জলাধার যেন রাতারাতি পরিণত হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রে।
এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো বিপাকে সেচ দফতর ও পুলিশের কর্তারা। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা জানান, একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত জলাধার নিয়ে সমস্ত কর্তারা ব্যস্ত। তার মাঝে এই হিড়িক ও ভিড় সমস্যায় ফেলেছে তাঁদের। কর্তাদের ক্ষোভ, কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সম্পূর্ণ দায় এসে চাপবে সেচ দফতর ও পুলিশের উপরেই। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা জলাধার মেরামত করব, না এই মানুষের ভিড় সামলাব? এ সবের জন্য আমাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।’’
সিউড়ির সৌমেন্দু দত্ত নামে এক যুবককে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁর সহাস্য দাবি, ‘‘ভিডিয়ো বানাচ্ছি, সমাজমাধ্যমে দেব।’’ জলাধার দেখতে আসা সিউড়ির মৃণাল দাস, সুবিনয় দাসদের বক্তব্য, ‘‘খবরে, সমাজমাধ্যমে দেখছি নানা ছবি ও ভিডিয়ো। তাই একবার স্বচক্ষে পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলাম। পুলিশ আমাদের চলে যেতে বলল, তাই ওখান থেকে সরে গেলাম।’’