থানার ভেতরেই যদি নিরাপত্তার ঘাটতি থাকে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কীভাবে নিশ্চিত হবে? এই প্রশ্নে নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। তদন্তে উঠে এসেছে, কলকাতার একাধিক থানার প্রবেশদ্বার, মালখানা কিংবা বাইরের চত্বর সবটাই এতদিন ছিল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে। সেই শূন্যস্থান পূরণে এবার বড় পদক্ষেপ নিল কলকাতা পুলিশের সদর দফতর।
শহরের দক্ষিণ, পূর্ব ও বন্দর ডিভিশনের আটটি থানায় বসানো হচ্ছে একশোর কাছাকাছি অত্যাধুনিক ক্যামেরা। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে এই যন্ত্রপাতি, যেখানে ছবি ও ভিডিয়োর পাশাপাশি শব্দও রেকর্ড হবে। পুলিশের নির্দেশ, দুর্গাপুজোর আগেই ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ করতে হবে। উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আলিপুর, ভবানীপুর, চেতলা ও কালীঘাট থানাকে দক্ষিণ বিভাগ থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পূর্ব বিভাগে আনন্দপুর ও পূর্ব যাদবপুর, আর বন্দর ডিভিশনে গার্ডেনরিচ ও পশ্চিম বন্দর থানায় এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি থানার ভেতরে এবং বাইরে মোট ১২টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ক্যামেরা বসবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন এই ক্যামেরাগুলি কেবল মাত্র দৃশ্যমান ফুটেজই নয়, উচ্চমানের অডিও রেকর্ডও রাখতে সক্ষম। থানার ভেতরের জন্য ব্যবহৃত ডোম ক্যামেরা ৩০ মিটার পর্যন্ত নজরদারি করতে পারবে ২৭০ ডিগ্রির পরিসরে। বাইরের জন্য বসানো হবে বুলেট ক্যামেরা, যার কভারেজ ২০ মিটার পর্যন্ত। রাস্তাঘাটের জন্য থাকবে আরও উন্নত মানের ক্যামেরা, যেগুলি সহজেই ফোকাল লেন্স পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট এলাকা নজরে আনতে পারবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রতিটি থানায় ফুটেজ সংরক্ষণের জন্য থাকবে ১৬ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ ক্ষমতা। ফলে ভবিষ্যতে তদন্তের জন্য যে কোনও সময় কাজে আসবে এই রেকর্ডিং। প্রগতি ময়দান থানার বাইরে ওসি-র সরকারি গাড়ি চুরি যাওয়ার ঘটনার পর থেকে পুলিশের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। লালবাজারের আশা, নতুন নজরদারি চালু হলে থানার ভেতরে-বাইরে অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকাংশে রোখা যাবে এবং সাধারণ মানুষের ভরসা আরও বাড়বে পুলিশের উপর।