• উধাও আস্ত বিধানসভা কেন্দ্র! 'আমরা কি নাগরিক নই?' জেলাশাসককে প্রশ্ন বিধায়কের, আতঙ্কিত ভোটাররা...
    আজকাল | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন এসআইআর নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।  তার মাঝেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য! রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভার মধ্যে নাম নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার। কার্যত ভোটার তালিকা থেকে উধাও কুলপি বিধানসভা। অনলাইনেও নাম নেই এই বিধানসভার। বিহার দিয়ে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকায় নিবিড় পরিমার্জন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। কমিশন পরে জানায়, শুধু বিহার নয়, অন্য রাজ্যগুলিতেও হবে এই প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই খসড়া তালিকায় বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে।  

    উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানেই কমিশন এই বিশেষ সমীক্ষা চালায়। শেষবার বাংলায় এসআইআর হয়েছিল ২০০২-২০০৪ সালের মধ্যে। ভোটার তালিকায় কারা মৃত, কারা ভুয়ো ভোটার, কারা বাসস্থান পরিবর্তন করেছেন এই সব কিছুই যাচাই করা হয় এই সমীক্ষায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোটা কুলপি বিধানসভা কেন্দ্রের ওই বছরের ভোটার তালিকারই খোঁজ পাচ্ছেন না ইলেকশন কমিশন বা ইসি-র আধিকারিকরা। পশ্চিমবঙ্গে যদি এবার এসআইআর হয়, তা হলে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সেই কারণে ওই বছরের ভোটার তালিকার খোঁজ চলছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) ওয়েবসাইটে এই ভোটার তালিকা সাধারণের দেখার জন্য ইতিমধ্যেই আপলোড করা হয়েছে। তাতেই নজরে এসেছে, কুলপি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা নেই। এ ছাড়াও বহু বিধানসভা কেন্দ্রের শতাধিক বুথের ভোটার তালিকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। 

    এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগে পড়েছেন কুলপি বিধানসভায় আনুমানিক ২ লক্ষ ভোটার। আতঙ্ক বেড়েছে কুলপি বিধানসভার নদী তীরবর্তী এলাকার গ্রামগুলির বাসিন্দাদের মধ্যে। এই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে গ্রামগুলিতেও। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাইত সরদার জানান, 'আমরা ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি। আমাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। নির্বাচন কমিশনের ২০০২ এর যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে সেই ভোটার তালিকায় আমাদের নাম নেই। আমাদের বাসস্থান হারাতে হবে আমরা যে এ দেশের নাগরিক তার কোন প্রমাণ থাকবে না। আমাদের চলে যেতে হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। কী হবে আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করছি নির্বাচন কমিশন আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখুক। আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি।' 

    এ বিষয়ে কুলপি ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রিয় হালদার বলেন, এই খবর ইতিমধ্যে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে‌। নির্বাচন কমিশনারের কাছে সমস্ত বিধানসভার ২০০২ সালের তালিকা রয়েছে কিন্তু আমাদের বিধানসভার ভোটার তালিকা নেই। আমরা ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জেলা শাসকও একই কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ২০০২ সালের কুলপি বিধানসভার ভোটার তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন আতঙ্কের কোন কারণ নেই।

     ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বলেন, 'কুলপি বিধানসভার কোনও ভোটার বাংলাদেশি নয়। যদি কেউ বাংলাদেশি প্রমাণ করতে পারে তাহলে তাদের থেকে নতুন করে রাজনীতি শিখতে হবে আমাদের। কুলপি বিধানসভার ভোটারদের যদি নাম বাদ যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ যারা কুলপি বিধানসভার ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের সকলের পদ  চলে যাওয়া উচিত। আমরা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। কুলপি বিধানসভার মানুষদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।' 

    এ প্রসঙ্গে কুলপি বিধানসভার স্থানীয় বাসিন্দা স্বর্ণেন্দু ঘোষ জানান, এই বিষয়টি সামনে আসার পর কুলপি বিধানসভার সমস্ত মানুষ আতঙ্কিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন বিহারের ক্ষেত্রে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছে সেখানে অনেক মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। সেই আতঙ্ক সারা পশ্চিমবাংলায় কাজ করছে। কুলপি বিধানসভা বাসিন্দারা অবশ্যই আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নাম নেই। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন কুলপি বিধানসভার ভোটার তালিকা দ্রুত আপলোড করুক এবং আমাদের দুশ্চিন্তা মুক্ত করুক। 

    কুলপি বিধানসভার বিধায়ক যোগোরঞ্জন হালদার জানান, 'জেলা শাসককে আমি জানিয়েছি আমাদের তো বিধানসভার ২০০২ এর ভোটার তালিকা পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে কি আমরা নাগরিক নই! তখন জেলা শাসক আমাদের জানিয়েছে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং যত দ্রুততার সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান হয় সে বিষয়ে আলোচনা করুন। যদি ২০০২ এর ভোটার তালিকা না পাওয়া যায় তাহলে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। এই খবর সামনে আসায় এলাকার মানুষেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না কী হবে! জেলাশাসক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরাও সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দিয়েছি আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এই সমস্যার সমাধান রাজ্য সরকার করবে।' তবু আতঙ্ক যেন পিছু খাচ্ছে না কুলপি এলাকা মানুষদের!
  • Link to this news (আজকাল)