• মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু কবে, যথাসময়েই তার ঘোষণা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • বিহারসহ একাধিক রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। খসড়া তালিকা থেকে লক্ষাধিক নাম বাদ পড়ায় রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সরব। এই পরিস্থিতিতে রবিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানালেন, পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর কবে থেকে শুরু হবে, তা সময়মতো ঘোষণা করা হবে।

    নির্বাচন কমিশনের দাবি, বহু দিন ধরেই একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটারের নাম থাকা নিয়ে অভিযোগ আসছিল। কখনও এক রাজ্যের বাসিন্দা ও অন্য রাজ্যের নাগরিকের হাতে চলে আসছিল একই নম্বর, আবার অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির নাম দুই জায়গায় থেকে যাচ্ছিল। কমিশন জানাচ্ছে, মার্চ মাসেই এই সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রায় তিন লক্ষ ভোটারের এপিক নম্বর বদলে দেওয়া হয়েছে, যাতে এক নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম না থাকে।

    জ্ঞানেশ কুমার বলেন, ‘ভারতের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার কেবল নাগরিকদেরই রয়েছে। নেপাল বা বাংলাদেশের নাগরিকরা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন না। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলবে। বিদেশি নাগরিকদের নাম চিহ্নিত হলে তাঁরা বাদ পড়বেন।’

    কেন এসআইআর জরুরি? এ প্রসঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, প্রতি বছর ভোটার তালিকা সংশোধন হলেও, তা অনেকাংশেই এলোমেলো প্রক্রিয়ায় হয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কথায়, ‘এসআইআর মূলত সবচেয়ে ব্যাপক ও নির্ভুল শুদ্ধিকরণের পদ্ধতি। এর আগে দেশজুড়ে একাধিকবার এই প্রক্রিয়া হয়েছে।’

    তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, প্রথমে রাজনৈতিক দলের বুথ লেভেল এজেন্টরা খসড়া তালিকা তৈরিতে যুক্ত থাকেন। পরে সংশোধনের জন্য নাগরিকরা আবেদন করতে পারেন। খসড়া তালিকা থেকে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পাল্টা দাবি, প্রকৃত সমস্যা তৈরি হয় রাজনৈতিক দলগুলির শৈথিল্যের জন্যই। খসড়া তালিকা নিয়ে সময়ে আপত্তি না তোলায় পরে বিতর্ক তৈরি হয়। জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট জানিয়ে দেন— ‘কমিশন ধনী-গরিব, পুরুষ-মহিলা, প্রবীণ বা যুবক— সবার পাশে সমানভাবে আছে। ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত করাই আমাদের সাংবিধানিক কর্তব্য।’

    সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে জানিয়েছে, খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম জেলা-ভিত্তিক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বুথভিত্তিক তালিকায় এপিক নম্বর অনুসন্ধানযোগ্য হতে হবে এবং নাম বাদ যাওয়ার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

    এই বিতর্কের আবহেই রাজনীতির পারদ চড়ছে। বিহারে শুরু হয়েছে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’। ২০টিরও বেশি জেলা পেরিয়ে ১ সেপ্টেম্বর পটনায় এই যাত্রা শেষ হবে। ঘটনাচক্রে, যাত্রার প্রথম দিনেই সাংবাদিক বৈঠক করল নির্বাচন কমিশন।

    সামনেই বিহার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই ভোটার তালিকা নিয়ে এত বড়সড় প্রশ্ন উঠায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এখন সবার দৃষ্টি কমিশনের পরবর্তী ঘোষণার দিকে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)