পুরুলিয়া জেলা জুড়ে মনসা পুজো ঘিরে এক আলাদা উন্মাদনা থাকে। এই পুজোয় অধিকাংশ পরিবার থেকেই মা বিষহরির কাছে জীব বলি দেওয়া হয়। তবে ছাগ বলির তুলনায় এই জেলায় হাঁস বলি দেওয়ার চল রয়েছে বেশি। তাই জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে লক্ষাধিক হাঁস বিক্রি হল এবার মনসা পুজোয়। সর্প দেবতার পুজোর পরদিনই পান্না। এইদিন পুরুলিয়া জেলা জুড়ে অঘোষিত বন্ধের রূপ নেয়।
সারাবছর মাঠে-ঘাটে, ঝোপ-জঙ্গল এবং চাষের জমিতে রাতদিন নানান কাজে ঘুরে বেড়াতে হয় মানুষকে। পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনায় মূলত কৃষক পরিবারগুলিই জীব বলি দিয়ে থাকে। দেবী মনসাকে খুশি রাখতে সারা বছর ধরেই সাধ্যমতো পাঁঠা, ভেড়া বা হাঁস কিনে রাখেন ভক্তরা। আবার অনেকে শুধুমাত্র মাংস খাওয়ার জন্য শহর কিংবা গ্রামগঞ্জের হাটগুলি থেকে চড়া দামে হলেও হাঁস কিনে নিয়ে আসেন এদিন। বলাবাহুল্য, মনসা পুজোর পরের দিন পান্নার দিন জেলার প্রায় সমস্ত পরিবারেই যেন মাংস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর এসব কারণেই পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে হাটগুলিতে হাঁসের পসরা নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। জেলার বিভিন্ন হাটে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল।
পুরুলিয়া কোট মোড়ের হাটে শনিবার হাঁস কিনতে এসে মফস্বল থানা এলাকার বৃদ্ধ দম্পতি ভূপেন মাহাতো ও পার্বতী মাহাতো জানান, তাঁরা কৃষক পরিবারের লোক, তাই পাঁঠা কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে মা মনসার কাছে মানত পূরণের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর তাঁরা হাঁস বলি দিয়ে থাকেন। বলরামপুরের বাসিন্দা হারু বাউরি বলেন যে, যত অভাবই থাক না কেন, টাকা জোগাড় করে সর্পদেবী মনসাকে খুশি করতে তাঁরা হাঁস বলি দিয়ে মানত পূরণ করেন। এঁরা সকলেই জানান, গতবারের চেয়ে এবছর হাঁসের দাম কিছুটা কম। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় এক একটি হাঁস বিক্রি হয়েছে। তবে কিছুটা হতাশা দেখা গিয়েছে হাঁস বিক্রেতাদের মধ্যে।
পুরুলিয়া শহরের হাঁস ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ঝালদার শেখ হিঞ্জল ও জয়পুরের বড়ট্যার হাটের হাঁস ব্যবসায়ী পদ্মলোচন মাহাতোরা জানালেন, বছরের এই একটা সময় বাড়তি লাভের আশায় বর্ধমানের রসুলপুর, হুগলির পাণ্ডুয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে হাজার হাজার টাকার হাঁস আমদানি করেছিলেন। অন্য বছর ভালো মুনাফা পাওয়া গেলেও এবছর হাঁসের বাজার ভালো ছিল না। দামও বেশি পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের মতে অন্যান্য বারের মতো এবারেও মনসাপূজা উপলক্ষে লক্ষাধিক হাঁস বিক্রি হয়েছে জেলায়।