অনুপকুমার দাস ও মনোজ মণ্ডল: নদীয়া (Nadia) স্বাধীনতা পেয়েছিল ১৮ অগাস্ট। সেই উপলক্ষে আজ জাতীয় পতাকা উঠল কৃষ্ণনগর (Krishnanagar) শহরে। আমরা সকলেই জানি, আমাদের দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে ১৫ অগাস্ট ১৯৪৭ সালে (15th August Independence Day)। তাহলে, আজ ১৮ অগাস্ট (18th August) কী ঘটল?
র্যাডক্লিফের ম্যাপে গণ্ডগোল
কিন্তু তারই মধ্যে আমাদের বাংলা এবং পাঞ্জাব বিভক্ত হয়েছিল দুই ভাগে। পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল অবিভক্ত বঙ্গদেশ। তবে এই বঙ্গদেশের বিচ্ছেদ নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত হয়েছিল। তারই ফলস্বরূপ নদীয়া মুর্শিদাবাদ মালদা দিনাজপুর যশোর জেলা নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। সমগ্র ভারত যখন ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করল, সেই সময়ে নদীয়া-সহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের মুখে কোনও হাসি ছিল না। ভারতভাগের সময় স্যার সিরিল র্যাডক্লিফের তৈরি ম্যাপের গণ্ডগোলের জন্যই ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারতবাসীর কাছে অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়েও নদীয়াবাসীর কাছে ছিল চরম দুঃখের ও বেদনার দিন।
কৃষ্ণনগর সদর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা, রানাঘাট
স্বাধীনতার প্রাক্কালে অবিভক্ত নদীয়ার মহকুমা ছিল পাঁচটি। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা ও রানাঘাট। র্যাডক্লিফের ম্যাপে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে নবদ্বীপ বাদে বাকি এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। নবদ্বীপকে নদীয়া জেলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। বাকি অংশ পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১২ অগাস্ট রেডিয়োতে ঘোষণা হয়, ভারতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে এবং নদীয়া জেলা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পড়েছে।
নদীয়ার রানি এবং
এ খবর জানতে পেরে নদীয়ার রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। সেই সময় কৃষ্ণনগরে পাকিস্তানের পতাকা উড়ছিল। এই সময় রানি জ্যোতির্ময়ী দেবীর নেতৃত্বে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কাবু লাহিড়ী, প্রমথনাথ শুকুল সাবিত্রী দাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকেন। এই সময় আন্দোলনকারী দলের কয়েকজন প্রতিনিধি ব্রিটিশ সরকারের কাছে দরবার করেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে স্যার র্যাডক্লিফকে ডেকে পাঠান এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন।
ভুলস্বীকার
স্যার র্যাডক্লিফ দেখলেন, ভুল তাঁরই। নদীয়া ভারতে থাকার কথা। চুয়াডাঙা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর মহকুমাকে নদীয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহকুমা নিয়ে গঠিত নদীয়ার নতুন সীমানা নির্ধারিত হয় শিকারপুর থেকে পলাশি। ১৮ অগাস্ট রেডিয়োতে ঘোষণা করা হয়, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহকুমা নিয়ে গঠিত নবগঠিত জেলা ভারত ভূখণ্ডেই থাকছে।
বনগাঁ
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ আদালত চত্বরেও আজ, ১৮ অগাস্টই পালন করা হল স্বাধীনতা দিবস। এদিন আদালতের আইনজীবী, ল ক্লার্ক এবং আদালতে আসা সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মাল্যদান করা হয়। এখানেও সেই একই ব্যাপার। দায়ী র্যাডক্লিফ কমিশন। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময়ে বাংলার বিভাজন নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। র্যাডক্লিফ কমিশনের তৈরি সীমান্তরেখা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৭ অগাস্ট, আর তা কার্যকর হয় ১৮ অগাস্ট থেকেই। সেই দিনেই বাংলার বহু মানুষ প্রথম বুঝতে পারেন, কে ভারতে থাকলেন, আর কে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেন। সীমান্তবর্তী বনগাঁ-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই দিনটিই স্বাধীনতার বাস্তব দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। তাই এখানকার মানুষ আজও ১৮ অগাস্টকেই তাঁদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করেন।