১৫ অগস্ট নয়, আজও জাতীয় পতাকা তুলে ১৮ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় নদিয়ার একাংশে
আনন্দবাজার | ১৮ আগস্ট ২০২৫
১৫ অগস্ট নয়, এখনও নদিয়ার কিছু অংশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয় ১৮ অগস্ট। তার নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস।
অগস্ট ১৯৪৭। গোটা দেশের সঙ্গে নদিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে চলছিল প্রাক স্বাধীনতার প্রস্তুতি। মাত্র একটা ঘোষণায় ম্লান হয়ে যায় উদ্দীপনা। অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো থেকে ঘোষণা করা হয়— নদিয়া জেলার বেশ কিছুটা অংশ স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। তা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ বলে চিহ্নিত হয়েছে। উৎসবের আনন্দ নিমেষে বদলে যায় বিষাদে। নদিয়ার কিছু অংশে শুরু হয় প্রতিবাদ।
কেন এমন হল? ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন ভারতের গভর্নর জেনারেল র্যাডক্লিফকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ জনের ‘বাউন্ডারি কমিশন’ গঠিত হয়। ৩০ জুন থেকে ১৪ অগস্ট— ৪৫ দিন সাক্ষ্য গ্রহণ-সহ একাধিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ‘বাউন্ডারি কমিশন’ রিপোর্ট তৈরি করে। ১৯৪৭ সালের ১২ অগস্ট র্যাডক্লিফের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয় নতুন মানচিত্র। মানচিত্র অঙ্কন করার সময় সাহেবের এক আঁচড়ের ভুলে নদিয়ার কৃষ্ণনগর, শিবনিবাস, রানাঘাট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই খবর রেডিয়োতে প্রচারিত হতেই প্রতিবাদ শুরু করেন নদিয়াবাসী। সক্রিয় হয়ে ওঠেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী। চারদিকে তখন বিশৃঙ্খলা। ইংরেজদের কাছে নদিয়ার নিরাপত্তা চাইলেন সৌরীশচন্দ্র। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে রাতারাতি সেনা মোতায়েন করা হয়। শেষ পর্যন্ত মানচিত্রে বদল ঘটে। পিছিয়ে দেওয়া হয় র্যাডক্লিফ লাইন। সমগ্র নদিয়া অন্তর্ভুক্ত হয় ভারতে। দু’দিন চরম অনিশ্চয়তায় কাটানোর পরে জারি হয় নতুন নির্দেশিকা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন নদিয়ার মানুষ। ভারত স্বাধীন হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরে ১৮ অগস্ট নদিয়ায় ওড়ে ভারতের জাতীয় পতাকা। নদিয়ার যে অংশগুলি প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল, সেই সব অঞ্চলের মানুষ এখনও মনে করেন তাঁদের স্বাধীনতা দিবস ১৮ অগস্ট।
অতীত স্মৃতি মনে রেখে শিবনিবাস, রানাঘাট এবং শান্তিপুরে স্বাধীনতার ৭৯ বছর পরেও নদিয়ার ভারতভুক্তি দিবস পালিত হয়। সোমবার শান্তিপুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, গঙ্গাবক্ষে নৌ বাইচ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও শিবনিবাসে পতাকা উত্তোলন থেকে নৌকা বাইচ, পদযাত্রা, বৃক্ষরোপণের মধ্যে দিয়ে ‘নদিয়ার স্বাধীনতা দিবস’ পালিত হচ্ছে।
নদিয়ার মাজদিয়া এলাকার ১০২ বছরের প্রভাত মণ্ডলের স্মৃতিতে এখনো স্পষ্ট উৎকণ্ঠার সেই তিন দিন। তিনি বলেন, ‘‘বেতারে ঘোষণা শুনে আমরা সকলে কৃষ্ণনগরের দিকে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ রাজবাড়ি থেকে খবর এল ভারতেই থাকবে মাজদিয়া। তার পরের দিন সরকারি ভাবে ঘোষণা হল আমাদের ভারতভুক্তি।’’